যানবাহনের গতিসীমা বিষয়ে প্রথমবারের মতো মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইন উদ্বোধন

ঢাকায় যানবাহন চালকসহ সাধারণ মানুষকে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ সম্পর্কে জানাতে প্রথমবারের মতো মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। আজ বিকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এর সম্মেলন কক্ষে এ ক্যাম্পেইন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) এর আওতায় জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কারিগরি সহায়তায় এ ক্যাম্পেইনের প্রচারণা উপকরণ নির্মাণ করা হয়েছে।

ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ মঈন উদ্দিন, এসইউপি, এসপিপি, এনডিসি, পিএসসি। বিআইজিআরএস এর ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর ও অতিরিক্ত সচিব (অব.) মো. আবদুল ওয়াদুদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামান, বিআরটিসি’র মহাব্যবস্থাপক (পরিচালনা) মেজর মো. নিজাম উদ্দিন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) জ্যেষ্ঠ সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মো. মামুনুর রশিদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জিয়াউর রহমান, ডিএনসিসি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম, রোড ট্রাফিক ভিকটিম ও রোড ক্র্যাশে নিহত সাবেক ছাত্রনেতা আরিফুল ইসলামের সহধর্মিনী রেবেকা সুলতানা নীলা, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কারিগরি পরামর্শক আমিনুল ইসলাম সুজন প্রমুখ।

এ ক্যাম্পেইনের মধ্যে রয়েছে ৩০ সেকেন্ড, ৪৫ সেকেন্ড, ১ মিনিট ও ৯০ সেকেন্ড ব্যাপ্তির ভিডিওচিত্র এবং এগুলো ওয়েবসাইট, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সড়কে ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রচার/প্রদর্শন করা হবে। ভিডিওচিত্রে রোড ক্র্যাশে নিহত তরুণ সংগঠক ও রাজনীতিক আরিফুল ইসলাম এর সহধর্মিনী রেবেকা সুলতানা নীলা অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি তাঁর ও তাঁদের সন্তানের প্রিয় মানুষকে হারানোর বিষয়টি ও তৎপরবর্তী অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এবং একইসঙ্গে তিনি সড়কে গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

এতে সড়কের পাশে সাইনেজ আকারে স্থাপনের জন্য দুটি ভিন্ন ডিজাইনের পোস্টার করা হয়েছে। এসব পোস্টারে গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর আহবান জানানো হয়েছে। এ প্রচারণা উপকরণ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), ডিএমপি, ডিটিসিএ’র মাধ্যমেও প্রচার করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির সড়কসমূহকে নিরাপদ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি। এ কাজ আরো গতিশীল করা হবে। মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। এ ক্যাম্পেইন গতিসীমা সম্পর্কে মানুষকে বিশেষত চালকদের সচেতন করবে। তিনি ডিএনসিসি, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্টদের গতিসীমা ক্যাম্পেইন আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

ব্রি. জে. মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ঢাকার সড়কে যারা মারা যায় তাদের মধ্যে পথচারী, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল আরোহী বেশি। পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য প্রশস্ত ফুটপাথ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন, অবকাঠামোগত উন্নতিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসাবে মোটরযান গতিসীমা সম্পর্কে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়েছে। মানুষ যদি গতিসীমা মেনে গাড়ি চালায় তাহলে সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠবে। তিনি সকলকে দায়িত্বের সঙ্গে গাড়ি চালানোর আহবান জানান।

মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ সড়ক পরিবহন আইন এর আওতায় মোটর যান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ প্রণয়ন করে। এতে সড়ক ও যানবাহনের ধরণ অনুযায়ী গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। শহরের অভ্যন্তরে জাতীয়/আঞ্চলিক মহাসড়কে সর্বোচ্চ ৪০ কি.মি./ঘন্টা এবং অন্যান্য অধিকাংশ সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কি.মি./ঘন্টা নির্ধারণ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যেমন সিটি করপোরেশনকেকে যৌক্তিক গতিসীমা নির্ধারণের কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে|

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর রাত ১১টার পর ঢাকার সড়কে আরিফুল ইসলাম (৪২) ও তাঁর বন্ধু সৌভিক অর্জুন (৪৪) দ্রুতগতির ট্রাকের চাপায় অকালে মারা যান। প্রয়াত আরিফুল ইসলাম এর স্ত্রী রেবেকা সুলতানা নীলা বলেন, ট্রাকটির গতি যদি কম থাকত তাহলে হয়ত আরিফ ও অর্জুন বেঁচে যেতো। অতিরিক্ত গতির কারণে আমার শিশুসন্তান তার বাবাকে হারায়। তিনি বলেন, সড়কে কোনো অকালমৃত্যুই কাম্য নয়। গতিসীমা বা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘণ বা সড়ক অব্যবস্থাপনার মতো ঘটনাগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। যেনো আর কোনো সন্তানকে পিতৃহারা বা কোনো স্ত্রীকে স্বামীহারা বা কোনো মাকে সন্তানহারা হতে না হয়।

ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, ঢাকায় রাত ৯ টার পর হতে সকাল ৮টা পর্যন্ত অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চলে এবং দিনের বেলায় যানজটে অস্থির যান চালকেরা ফাঁকা রাস্তা পেলে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালান, যা সড়ককে অনিরাপদ করে তোলে। এজন্য গতিসীমা নির্দেশিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এ মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইন সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে বিআরটিএ, ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ, সিয়াম, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ব্র্যাক, নিরাপদ সড়ক চাই, সেন্টার ফর ইনজ্যুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ-বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বাংলাদেশ রোড সেফটি কোয়ালিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles