গেল বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে আনন্দে ও উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন সাফজয়ী ফুটবল তারকা আনুচিং মোগিনী। এ উচ্ছ্বাস ঢাকা শহরে থামেনি। ঢাকায় ছাদখোলা বাসে আনন্দে মেতেছিলেন এমনকি নিজ জেলা খাগড়াছড়িতেও। সেপ্টেম্বরে হিমালয় জয় করা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এ ফরোয়ার্ডের খেলোয়ারের নতুন বছরে মাত্র চারমাসের মাথায় জানুয়ারিতে শুনতে হলো বিষাদের কাহিনী । বাজলো বিদায়ের ঘন্টা। গত শনিবার বাফুফে থেকে আনুচিংকে বাদ দিয়ে তাকে ডেকে বলা হয় ক্যাম্প ছাড়ার।
অথচ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে এ ফরোয়ার্ডের ভূমিকা কম ছিলো না। সাফল্যের সেই গল্পে বিশ বছরের কাছাকাছি আনুচিং মোগিনির ভূমিকাও কম ছিলো না। কিন্তু সাফজয়ী নারী দলের এই সদস্যই ফুটবল খেলা থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সাফজয়ী ফুটবল তারকা আনুচিং মোগিনীর ক্ষোভ ও অভিমানে অবসরে ঘোষণা দিয়েছেন ফুটবল। গত শনিবার বাফুফে থেকে আনুচিংকে বাদ দিয়ে তাকে ডেকে বলা হয় ক্যাম্প ছাড়ার। পরের দিন ক্ষোভ আর অভিমানে নিজবাড়ি খাগড়াছড়িতে বাড়ি ফিরে যান এ ফুটবল তারকা। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন আনুচিং।
প্যারিসে অলিম্পিক ফুটবল বাছাই পর্বের জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে অনুশীলন করে যাচ্ছেন আনুচিং মোগিনী। সারাদিন অনুশীলনের পর সন্ধ্যার দিকে তাকে ক্যাম্প ছাড়ার কথা বলা হয়েছে বলে জানান আনুচিং মোগিনী । তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন,‘ ‘তারা যদি বলতো অন্যান্য খেলোয়ারদের সাথে ফাইট করে না পারলে বাফুফে ছাড়তে। তখন টা মানা যেত। কিন্তু তারা তো বিষয়টি আগে জানায় নি।’
রিতুপর্ণা, আনাই,আনুচিং, মনিকা ও রুপনাদের উঠে আসার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন স্থানীয় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন রাঙামাটির ঘাগড়ার শান্তি মণি চাকমা ও শিক্ষক বীরসেন চাকমা। আনুচিং মোগিনীকে বাদ দেওয়ার পর থেকে তাকে মুঠোফোনে কল দিয়েও সংযোগ পায়নি বলে জানান আনুচিং এর ফুটবল প্রশিক্ষক শান্তি মণি চাকমা। তিনি বলেন,‘শুনেছি আনুচিংকে একেবারে বাদ দেওয়া হয়নি। এবারের অনুশীলনে ভালো পারফরমেন্স করতে না পারায় তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন কোনো কিছু মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কেননা আনুচিং এর সাথে কথা বলতে পারি নি।’
ফরোয়ার্ডের খেলোয়ার আনুচিং মোগিনী বলেন,‘ খাগড়াছড়িতে থেকে আমরা দুইবোন জাতীয় দলে খেলেছি। এখন আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নারী ফুটবল দলে আমার থেকে ভালো পজিশনের ভালো খেলোয়ার আছে তা মানলাম। আমি দীর্ঘ ছয় বছর ক্যাম্পে অনুশীলন করে ফুটবলের স্বাভাবিক জীবনটা পায়নি। কিন্তু এ সময়ে শুধু এক নিমিষেই ফুটবল ফেডারেশন ছাড়তে হলো। খুব কষ্ট লেগেছিলো। যা এত তাড়াতাড়ি ফুটবল খেলা ছাড়তে হবে। তবে আমি জানি না আবার পুনরায় ফুটবল খেলায় ফিরতে পারব কিনা। কেননা, এর আগে তিন—চার জন যারা বাদ পড়েছেন তারা এখনও ডাক পায়নি। তবে কিভাবে আবার আমার খেলার সুযোগ হবে।
ফরোয়ার্ডের এ খেলোয়ারের বাড়ি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়। আনুচিং মোগিনী ও আনাই মোগিনী দুই ফুটবল তারকা আপন যমজ বোন। তার বাবা পেশায় একজন কৃষক। গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা আনুচিং অনূর্ধ্ব—১৫ ও অনূর্ধ্ব—১৭ নারী খেলোয়ারের সাফে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য । ২০১১ সালে তিনি ফুটবল খেলা শুরু করেন।
গরীব পরিবারে জন্ম আনুচিং মোগিনীর। স্বপ্ন ছিলো মাথা তুলে দাঁড়াবার। স্বপ্ন ছিলো পরিবারকে সুখ এনে দেওয়ার। একসময় যে ফুটবল আনুচিংকে সুপরিচিতি লাভ করে দিয়েছিলো সেই ফুটবলই আজ থাকে কষ্ট দিলো। শুনতে হলো বিদায়ের ঘণ্টা। যা এ পেশায় আসবেন কিনা জানা নেই পাহাড়ের এই ফুটবল তারকার।