হবিগঞ্জের পর্যটন খ্যাত উপজেলার নাম চুনারুঘাট। চা বাগানে পরিবেষ্টিত দৃষ্টি নন্দন সবুজ বিপ্লব, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা এই উপজেলায় অবস্থিত। এ উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে খরস্রোতা খোয়াই নদী। নদীর পূর্ব পারে চারটি ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ আর পশ্চিম পারে ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে বিভক্ত করেছে এই নদী। দুই পারের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা খোয়াই নদীর ওপর এই বেইলি সেতু।
এরশাদ সরকারের আমলে সেতুটি নির্মান করেন চুনারুঘাট মাধবপুরের প্রয়াত সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার। সরু এই সেতু দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুটি সরু হওয়ার কারণে একসাথে দুটি যানবাহন পারাপার হতে পারেনা। ফলে ব্রীজের দু’পাশে আটকা পরে শত শত যানবাহন। শহরে আসা যাওয়ায় মানুষকে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায়ই জটি আটকা থাকতে হয়। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তো আছেই। খোয়াই নদীর ওপর ১৯৯৪ সালে এই বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের ১২ বছর এর মেয়াদকাল থাকলেও প্রায় দেড় যুগ ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সওজ কর্তৃপক্ষ ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙালেও তা মানছেন না চালকরা। প্রতিনিয়ত বালুভর্তি ট্রাক-ট্রাক্টর চলছে এ ব্রিজ দিয়ে। অনেক সময় যানজটের কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেতুর পাড়ে বসে থাকতে হয়। সরেজমিনে সেতু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও হাজারো মানুষ চলাচল করছে সেতু দিয়ে। সেতুতে লাগানো স্ল্যাব ইতিমধ্যে অনেকাংশ উঠে গেছে, অনেক স্থানে স্ল্যাব ভেঙে গেছে। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে রে?লিংগুলো। ফলে দিন দিন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সেতুটি। কয়েকজন অটোরিকশা চালক জানান, প্রতিদিন খোয়াই নদীর ওপর বেইলি সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নদীতে পানি বাড়তে থাকলে সেতু নড়াচড়া করে। এ ছাড়া সেতুর পিলারের বেইজের নিচের মাটি সরে গেছে। যেকোনো সময় সেতু ভেঙে মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। এ সেতু দিয়ে চলাচল করে চুনারুঘাট দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শত শত ছাত্র/ছাত্রী। বিকল্প কোনো সেতু না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। যানজটের কারণে সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। কোন কোন দিন যানজটে পড়ে ঘন্টা চলে যায় রাস্তায়। হবিগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সল দৈনিক জানান সিলেট সড়ক জোনের আওতায় বেইলি সেতুগুলো রয়েছে। স্থায়ী আরসিসি অথবা পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে তারা ডিপিপির কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। দ্রুত সেতুগুলো অপসারণ করে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হবে।