‘আপনার চোখের কর্নিয়া দান করে মৃত্যুর পরেও অন্ধ মানুষের জীবনব্যাপী চোখের আলো হয়ে থাকুন’ স্লোগানকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ক্যারাটোপ্লাস্টি এন্ড আই ডোনেশন: বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় ( ২২ ডিসেম্বর ২০২২) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কর্নিয়া এন্ড রিফ্রাক্টিভ সার্জনস (বিসিআরএস) সন্ধানী আই ব্যাংক (আই হাসপাতাল) এর যৌথ উদ্যোগে মরণোত্তর চক্ষুদানে উৎসাহিত করতে এ সেমিনার আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বহুদিন থেকে আমি সন্ধ্যানীর সঙ্গে জড়িত। আমি সন্ধ্যানীর প্রথম চক্ষু উত্তলন করেছি। ৩৮ বছরে ৪ হাজার চক্ষুদান করার সুযোগ পেয়েছে সন্ধ্যানী। ধর্মভীরু এদেশে এসব পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, সন্ধ্যানীসহ চক্ষু দানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের আগামী ৫ বছরের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। আমরা ঠিক কতটি চক্ষুদান করতে পারব তা নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য জনসচেতনতার বিকল্প নাই। এক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যমের বিরাট অবদান রাখতে পারে। মরণোত্তর চক্ষুদানের বিষয়ে ভারত শ্রীলংকা নেপালের এর সঙ্গে কাজ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে কৃষকদের কর্ণিয়ায় রোগ সংখ্যা একটু কমেছে। মনে রাখতে ও সচেতন করতে ধান ও পাট কাটার সময় কৃষকদের চোখে চশমা পরতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। চক্ষু পরিস্কার করার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।কানের মত করে চক্ষু পরিক্ষা করা যাবে না। টিস্যু দিয়ে চক্ষু পরিষ্কার করার সময় চক্ষুতে আঘাত লাগার কারণে অন্ধ হয়ে যাবে। এটি ট্রমা জনিত অন্ধত্ব। তাই যেনতেনভাবে চক্ষু পরিষ্কার করা যাবে না।
সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বে অন্তত ২.২ বিলিয়ন মানুষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪.২ মিলিয়ন মানুষের কর্নিয়ার অস্পষ্টতা রয়েছে। সন্ধ্যানীর মতে মতে দেশে ৬০০০ লোক চক্ষু সংযোজনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০০ জন এখনও কর্নিয়া পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বে ভুগছেন। তাদের চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করলে দৃষ্টি ফিরে পাবেন। তবে বাংলাদেশে মানুষের মাঝে চক্ষু দান করার প্রবণতা নেই বললেই চলে। বিদেশ থেকে আমদানি করে অন্ধ মানুষের চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
সন্ধানীর মাধ্যমে অল্প কিছু সংখ্যক কর্নিয়া পাওয়া যায়। যা প্রয়োজনের তুলনা নিতান্তই অপ্রতুল। সাধারণ মানুষের মধ্যে কর্নিয়াদানের উৎসাহ সৃষ্টি করতে ব্যাপক জনসচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। মৃত্যুর পর একজন মানুষ চোখের ছোট একটি অংশ (১২ এমএম) কর্নিয়া দানের মাধ্যমে একজন অন্ধ মানুষের চোখের দৃষ্টি দান করা সম্ভব। এর মাধ্যমে মৃতুর পরেও একজন মানুষ অন্ধ মানুষের জীবনব্যাপী চোখের আলো হয়ে থাকতে পারেন। কর্নিয়া দান করলে মৃত্যুর পর চেহারার কোন বিকৃতি ঘটে না। ধর্মীভাবে এ বিষয়ে কোন নিষেধ নাই। ইরানের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও সবাই মৃত্যুর পর চক্ষু দানের অঙ্গীকার জীবিত থাকা অবস্থাতেই করে থাকেন। কর্নিয়া দান করা, রক্তদান ও কিডনী দান করার থেকেও সহজ একটি প্রক্রিয়া।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (ওএসবি) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএমএ মুক্তাদির। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সন্ধানী ন্যাশনাল আই ডোনেশন সোসাইটি এবং সন্ধানী ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাংক, বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ তোসাদ্দেক হোসাইন সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করেন বিসিআরএস এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল কাদের। সেমিনারে হাউ টু ইনভলব দ্যা হোল নেশন ইন আই ডোনেশন-আওয়ার রেসপন্সসিবিলিটি শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, এডভান্সমেন্ট ইন ক্যারাটোপ্লাস্টি: নিউ ইনসাইটস শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মোঃ শাফি খান এবং ডা. মোঃ জয়নাল ইসলাম সন্ধানী-দি টর্চ বেয়ারার অফ আই ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. মোঃ সাইফুল্লাহ, অধ্যাপক সারোয়ার আলম, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ হাসান।