আজ ১২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক চান্দিনা মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি স্মরনীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় খবর আসে পাকিস্তানি দখলদাররা তাড়া খেয়ে দিশেহারা অবস্থায় ময়নামতি সেনানিবাসে আশ্রয়ের আশায় পশ্চাদ প্রসারণ করছিলো। তারা চান্দিনা উপজেলা মাইজখার ইউনিয়নের ফাঐ, করতলা পর্যন্ত পৌছলে সেখানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ প্রতিরোধে গড়ে তোলেন। চারিদিক থেকে প্রচন্ড লড়াই শুরু হয়ে যায় এক সময় পাকিস্তানি সেনাদের গুলি ফুড়িয়ে এলে আত্মসমর্পনের প্রস্তাব দেয়। এতে সাড়া দিয়ে বুকে অসীম সাহস নিয়ে এগিয়ে যান অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধা নায়েক সৈয়দ আহমেদ। তিনি এগিয়ে গিয়ে পাকসেনা দলের সঙ্গে করমর্দন করেন। কিন্ত ৯ মাসের অসহনীয় অত্যাচার-নির্যাতনে বিক্ষুব্দ সাধারণ মানুষ লাঠিসোটা হাতে তাদের পুঞ্জিভূত সমস্ত ঘৃণা ও ক্রোধ নিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মারমুখী জনতার সাঁড়াশি আক্রমণে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে হানাদার সৈন্যরা আবার হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ একজন পাকিস্তানি সেনার অস্ত্র ধরে ফেলেন। দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। এক পর্যায়ে টানা হেঁচড়ায় ঐ পাকিস্তানি সেনার বন্দুক থেকে একটি বুলেট সৈয়দ আহমেদের বাম উরু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। আহত সৈয়দ আহমেদ বুলেটবিদ্ধ স্থানে গায়ের গেঞ্জি খুলে ব্যান্ডেজ বানিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেন। তার এই অসহায় অবস্থায় পাকসেনারা বর্বারোচিত ভাবে তার বুকে বেয়নেট চার্জ করে। বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে তাজা রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এসে রঞ্জিত করে ফাঐ-করতলা শ্যামল মাটি। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শহীদ হন টগবগে তরুন বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর সকালে লাশ নিয়ে মিছিলে বের করেন সহযোদ্ধারা। রণক্ষেত্রে ১৩ জন পাকিস্তানি সেনার লাশ এবং আরেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ইপিআর এর নায়ক কাজী আব্দুল লতিফের মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। পাকিস্তানি হানাদারেরা ততক্ষনে পালিয়ে গেছে। শহীদ সৈয়দ আহমেদ ও শহীদ কাজী আব্দুল লতিফের আত্মত্যাগে।
অপর দিকে ময়নামতি সেনা নিবাসে মিত্র বাহিনীর সেলিং এর কারণে ১১ ডিসেম্বর ভোরে পাক হানাদার বাহিনী ময়নামতি সেনানিবাস থেকে বরুড়া হয়ে চান্দিনার উপর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন স্থানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। আর ওই ঘটনাটি চান্দিনার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর এলে মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় চান্দিনার মুক্তিযোদ্ধারা মানসিক ভাবে দ্বিগুন শক্তিশালী হয়ে পাকিবাহিনীকে প্রতিহত করতে এগিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধারা মনে করে সংবাদটা অবিশ্বাস্য মনে হলে ও নরপশুগুলো এত তাড়াতাড়ি আত্নসমর্পন করবে ভাবিনী।
চান্দিনা উপজেলার স্মৃতি সৌধ ফলকে যে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের নাম খচিত রয়েছে তারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা- সৈয়দ আহমেদ- নাওতলা, জয়নাল আবেদীন- রাজামেহার, ফুলমিয়া- বিচুন্দাইর, বীরজনতা: আব্দুল মান্নান- মাইজখার, ইউছুফ আলী- ভাকসার, কেরামত আলী- কালেমসার, বীর প্রতিক আব্দুল মমিন- পিপুইয়া, মোঃ আব্দুল মালেক- গল্লাই, মোঃ আলী আশ্রাফ- গল্লাই, সেলিম মিয়া- ধেরেরা, মোঃ রফিকুল ইসলাম- হরিন চাতুরি, মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান- কুটুম্বপুর, শব্দর আলী- ই.পি.আর, মজিবুর রহমান মঞ্জু- হাসিমপুর। আত্মত্যাগের এই মহান স্মৃতি স্বাধীনতার সংলগ্নে প্রতি বছর এই দিনে সবার মনে নাড়া দেয়। এই ভাবেই চান্দিনা মুক্ত হয় পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম রফিকুল ইসলাম।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: জিয়া উদ্দিন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: আব্দুর রহমান নাসির।
সহ সম্পাদক: আসমা আক্তার
সহ সম্পাদক: মোহম্মদ আবু দারদা।