মণিরামপুরে জয়পুর ট্রাজেডির শিকার সাচ্চুর জটিল অপারেশনের প্রয়োজন

যশোরের মণিরামপুরে ২০১৩ সালের জয়পুর ট্রাজেডির সেই ভয়াবহ সন্ত্রাসীর শিকার নির্মাণ শ্রমিক ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী সাজেদুল ইসলাম সাচ্চু মিয়ার (৪৯) পঙ্গুত্ব ঠেকাতে বড় ধরনের জটিল অপারেশন করা প্রয়োজন। সন্ত্রাসীরা সাচ্চু মিয়াকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে দু’পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়াসহ রক্তাক্ত জখম করে। তৎকালিন সময়ে দীর্ঘ ২ বছর চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সূস্থ হলেও বর্তমানে তার শাররীক অবস্থা পর্যায়ক্রমে খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ তার সন্ত্রাসীর মারপিটে তার গুড়িয়ে যাওয়া পায়ের ভিতরে যে রড দেয়া ছিল-বর্তমানে সেটি বের না করলে সে ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন পরিবারটি-এমন তথ্য দিয়েছেন সাচ্চু মিয়ার স্ত্রী নারগীস বেগম। সাজেদুল ইসলাম সাচ্চু মিয়া উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের মৃত লাল মিয়া সরদারের পুত্র।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২০ শতাংশ জমিতে সাচ্চু মিয়া ও তার বড় ভাই বাহারুল ইসলামের দু’টি অর্ধনির্মিত ভাঙ্গাচোড়া বাড়ি। তাছাড়া মাঠে কৃষি জমি দু’ভাইয়ের সর্বসাকুল্যে ২০ শতাংশ মত হবে। চিকিৎসার পিছনে ছুটতে-ছুটতে সেটিও এখন বন্ধকের খাতায় চলে গেছে। এক সময়ে হয়তো সেটিও বিক্রি করে দিতে হবে বলে সাচ্চুর মা হাসিনা বেগম। সাচ্চু মিয়া নির্মাণ শ্রমিকের কাজ ও বড় ভাই বাহারুল ইসলাম দিনমজুরীর কাজ করে কাজ করে কোন রকমে সংসার চলে। ্য আত্মীয়-সজন, ও হিতাকাঙ্খিদের সহযোগিতায় সাচ্চু মিয়ার চিকিৎসার পিছনে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ লক্ষাধিক লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। তারপরেও পুরোপুরি সূস্থ হয়নি সে। পায়ের ভিতরের রড স্থাপন করা স্থান গুলোতে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ধীরে-ধীরে আারও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন অপারেশন করে তার পায়ের ভিতরের রড গুলো খুব দ্রæত বের করতে হবে। তা নাহলে সে আস্তে আস্তে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। এতে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন। এরই মধ্যে যশোর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ জহিরুল ইসলামের সহযোগিতায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে দু’পায়ের দু’টি রড বের করে করা হয়েছে। যাতায়াত, পরীক্ষা-নিরীক্ষ, কিছু ঔষুধপত্র ক্রয়সহ নানাবিধ প্রয়োজনে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। যার বেশির ভাগই হিতাকাঙ্খিরা যুগিয়েছেন। সাচ্চুকে এখন বাড়ীতে আনা হয়েছে। নিয়মিত ঔষুধপত্রসহ পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ না করলে সংসার চলবে কি করে-এ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
সাচ্চু মিয়ার বিধবা মা হাসিনা বেগম জানান, ২০১৩ সালে স্বাধীনতা বিরোধী ও একাত্তরের গণহত্যার দায়ে দোষী দেলোয়ার হোসেন সাইদী, সাখা চৌধুরীসহ কয়েকজনের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে মণিরামপুর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলে। সেই ধারাবাহিকতায় মণিরামপুরের জয়পুর গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের শতাধিক বাড়ী-ঘরে অগ্নি সংযোগ, ভাংচুরসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের কর্মী-সমর্থকদের উপর চলে পৈচাশিক নির্যাতন। এতে ২ শতাধিক নেতাকর্মী আহতসহ পঙ্গুত্ব বরণ করে অন্তত: ২০ জন। আমার পুত্র সাচ্চু আওয়ামীলীগের কর্মী হওয়ায় সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়াসহ রক্তাক্ত জখম করে। তাছাড়া ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারী ও স্থাগিত হওয়া কেন্দ্র গুলোর ১৬ জানুয়ারীর নির্বাচনে আমার বড় ছেলে বাহারুলকে শাররীক ভাবে নির্যাতন করা হয়। একাত্তরের গণহত্যার দায়ে দোষী দেলোয়ার হোসেন সাইদীর ফাঁসির রায়ের দিন আমার ছোট ছেলে সাচ্চু মিয়া মাঠে শ্রমিকের কাজ করছিল। সেখানে গিয়ে আমার ছেলেকে রক্তাক্ত জখমসহ হাত-পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেই সন্ত্রাসীরা। তৎকালিন সংসদ সদস্য মরহুম খান টিপু সুলতানের সহযোগিতায় মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং পরিশেষে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, ঢাকাতে প্রায় দুই বছর চিকিৎসা করানো হয়। এ সময় সহ সর্বদা আমাকে সহযোগিতা ও সার্বিক খোজখবর নিতেন আমার এলাকার কৃত্বিসন্তান সাবরেজিষ্ট্রার সুব্রত সিংহ বাবু।
সে সময়ে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছিলেন ধারাবাহিক চিকিৎসায় সাচ্চুর পা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হতে পারে। তবে সেটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। সাচ্চুর দু’পায়ে ৬টি রড ঢোকানো আছে। এ রড গুলো আরও আগেই অপারেশন করে বের করার কথা চিকিৎসকরা বলেছিলেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে সেটা করা হয়নি। বর্তমানে সাচ্চুর শাররীর অবস্থা খারাপের দিকে গেলে আবারও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়। তার পরামর্শে নভেম্বর মাসের শেষ দিকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, ঢাকাতে গিয়ে দু’পা থেকে ৪টি রড বের করা হয়েছে। আপাতত: আর অপারেশন করা যাবে না। শরীর আর একটু সুস্থ হলে পুনরায় অপারেশন করা যাবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
সাচ্চুর স্ত্রী নারগীচ বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন নির্মাণ শ্রমিক। তার সামান্য আয়ে শাশুড়ী ও ৩ সন্তান নিয়ে কোন রকমে জীবন চলে যেতো। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে পঙ্গু করে দিয়ে আমাদের একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে। পঙ্গু অবস্থায় আমার স্বামীর সামান্য আয়ে একদিকে পরিবারের ভোরণ-পোষন অন্যদিকে তার চিকিৎসা। খুবই দূর্বিসহ জীবন-যাপন করি আমারা। এভাবে ৯ বছর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে সহায়-সম্বল যা ছিল তা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এখন ধারদেনার পথও প্রায় বন্ধ। একদিকে সংসারের খরচ, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া তার উপর তার চিকিৎসা। এ চিন্তায় আমার স্বামীসহ পরিবারের সবাই খুবই উদ্বিগ্ন থাকি। একটা অপারেশন হয়েছে-তাতে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। যার বেশীর ভাগই হিতাকাঙ্খিদের সহযোগিতা ও ধারদেনার উপর ভর করে। পরবর্তীতে আবার অপারেশন করাতে আরও দেড় থেকে ২ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন এখন পুনরায় অপারেশন করতে যে টাকা প্রয়োজন-তা যোগাড় করার কোন পথ নেই। আমার স্বামী সারাদিন দুঃচিন্তায় থাকে তার উপর ব্যথার যন্ত্রণায় সারারাত কান্না করে, কাউকে ঠিকমত ঘুমাতে দেয় না। ছেলে-মেয়েরাও চিন্তা করে অর্থের অভাবে তাদের পিতার চিকিৎসাসহ তাদের পড়ালেখাটা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারবে তো!
সাচ্চু বলেন, ৯ বছর ধরে আমি এ দূর্বিসহ জীবন-যাপন করছি। অনেক আগেই চিকিৎসক আমাকে অপারেশন করে রড গুলো বের করে ফেলতে বলেছিলেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। ঠিকমত কাজ করতে পারিনা, ব্যথায় রাতেও ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা। বৃদ্ধ মাতা, স্ত্রী সন্তানদের কথা চিন্তা করে কয়েকজন হিতাকাঙ্খির সহযোগিতা নিয়ে ছোট অপারেশন দুটো করতে পেরেছি। চিকিৎসক বলেছেন সামনে আরও বড় অপারেশন করতে হবে। এ পর্যন্ত করতে পেরেছি যাদের সহযোগিতা নিয়ে তাদের কাছে আমি চিরঋনি হয়ে গেলাম। মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যক্ষ আলহাজ্জ্ব কাজী মাহমুদুল হাসান, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক কামরুল হাসান বারী, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহিত নাথ, কেন্দ্রীয় যুবলীগনেতা জয়দেব নন্দী, ঠিকাদার হাজী খলিলুর রহমান, মণিরামপুরের বাবুল করিম বাবলু, শামীম হোসেন, ঠিকাদার সিদ্দীকুর রহমান, অভি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার, মণিরামপুর দলীল লেখক সমিতি, কৃষকলীগের সভাপতি সহ আমাকে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক মুরাদুজ্জামান মুরাদ ভাই সহযোগিতার পাশাপাশি নিজে উদ্যোগী হয়ে আমার জন্য মানুষের কাছে গিয়ে আমার দূর্দশার কথা তুলে ধরে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেছেন এবং এখনও করছেন। ঢাকায় ব্যাপক সহযোগিতাসহ সার্বিক খোজখরব নিয়েছেন যুবলীগনেতা জযদেব নন্দী। পরিশেষে এ টুকুই বলবো আমি পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তি পেতে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা চাই। যোগাযোগ-০১৭৬৬৮৩৩২১৪।

 

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles