প্রবেশ টিকিট বিক্রির নামে লটারি বাণিজ্য করাই যার পেশা

নেত্রকোণার কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের ব্যানারে গত ২২ জানুয়ারি শিল্প ও পণ্য মেলা শুরু হয়। মেলার নামের সাথে দোকানের পণ্যের কোন মিল ছিল না। গ্রামীণ ঐতিহ্য কৃষ্টি কালচারের দোকানপাট বা শিশু বিনোদনের পর্যাপ্ত সামগ্রী চোখে পড়ার মতো ছিল না। মেলার প্রবেশ মূল্য ছিল ২০ টাকা। অর্থাৎ কেউ যদি মেলায় প্রবেশ করতো তাকে গেইটে গুনতে হতো ২০ টাকা। নিয়মানুযায়ী মেলার বিভিন্ন প্রবেশ গেইটে প্রবেশ টিকিট বিক্রির করার কথা। কিন্তু মেলার প্রকৃত মালিক রফিকুল ইসলাম গেইটে টিকিট বিক্রি সীমাবদ্ধ না রেখে কেন্দুয়া উপজেলা সহ আশেপাশের আরও অন্যান্য উপজেলায় সিএনজি/অটোরিক্সা দিয়ে লোভনীয় অফারের অফারের মাধ্যমে প্রবেশ টিকিট বিক্রি করান। মেলার নাম করে লটারি পরিচালনা করায় রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় জনগণের মধ্য অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদার জানান, দেশের হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্য শিল্প ও পণ্য মেলার মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পের প্রসার ঘটার প্রত্যাশা থেকে মেলাটির অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে প্রবেশ টিকিটের নামে লটারির মাধ্যমে জুয়ার অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযোগ আসার সাথে সাথেই লটারি বন্ধ করে দিই। কিন্তু বন্ধ করার পরও আমার নির্বাহী আদেশ অমান্য করে মেলার মালিক রফিকুল ইসলাম পুনরায় চালু করে রফিকুল ইসলাম।

ইমদাদুল হক তালুকদার আরও বলেন, মেলার লটারির বিষয়টি বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নজরে আসলে তিনি আমাকে শিল্প ও পণ্য মেলা বন্ধের নির্দেশ দেন। তাছাড়াও বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা রফিকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন। রফিক কেন্দুয়া পৌর কর ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একজন ভুক্তভোগীর জিডির ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে, আমি থানায় গিয়ে এএসপি সার্কেল (কেন্দুয়া-আটপাড়া), কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ও সকল পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সামনে প্রতারক রফিকুল ইসলামকে মুখোমুখি করি বিষয়টি সমাধানের জন্য। আলোচনার একপর্যায়ে রফিকুল ইসলাম সকলের সামনে দেনা-পাওনা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেন ও কিছু বকেয়া পৌর কর পরিশোধ করে লিখিত মুচলেকা দিয়ে যান চলে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই মেলার মালিক প্রতারক রফিকুল ইসলাম প্রশাসন, কেন্দুয়া প্রেসক্লাব কতৃপক্ষ ও বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।

মেলায় প্রবেশের কথা বলে অবাধে টিকিট বিক্রি করে লটারির নামে যে বাণিজ্য করে রফিকুল ইসলাম তা সচেতন মহলে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। যার ফলে রফিককে লটারি বন্ধ করতে বাধ্য করেন ইউএনও। কিন্তু কে শোনে কার কথা সে আবার লটারি চালু করে। শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে মেলার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় ও মেলার আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রশাসনের অধীনে চলে যায়। ইউএনও ইমদাদ হক তালুকদার জানান- আমি ও অফিসার ইনচার্জ স্বশরীরে উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীদের সকল জব্দকৃত পণ্য নিরাপদে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করি। পৌর কর আদায়ের জন্য পৌরসভা সার্টিফিকেট মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের দুষ্ট প্রকৃতির লোকজনদের হাতে দেশের শিল্প সংস্কৃতি কখনোই নিরাপদ না।

সারোয়ার জাহান নামক একজন ডেকোরেশন ব্যবসায়ী জানা- রফিক প্রতিদিন আমাকে ৬,০০০ টাকা ভাড়া দেওয়ার কথা বলেছিল, কিন্তু এখনো তার কাছে আমার ২ লাখ টাকার উপরে পাওনা রয়েছে, টুটন নামক আরেক ব্যবসায়ী জানান- রফিক লটারিতে পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছিল রফিকুল ইসলাম।

কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের বরাত দিয়ে জানা যায়- সারাদেশের শিল্প সংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্য এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সুস্থ বিনোদনের পর্যাপ্ত কোন ব্যবস্থা নেই, সেই কথা বিবেচনা করে কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের ব্যানারে শিল্প ও পণ্য মেলার শুরু হয়েছিল কিন্তু মেলার প্রকুত মালিক রফিকুল ইসলাম প্রবেশ টিকিটের নামে লটারি বাণিজ্য করে সুন্দর একটা কৃষ্টি কালচারকে কলুষিত করেছে। মেলার মালিক রফিকুল ইসলাম সে নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য মেলায় যা যা অনিয়ম করেছে তার জন্য সে নিজেই দায়ী। প্রশাসনের নিয়মের বাইরে সে লটারি বাণিজ্য করেছে সে একজন প্রতারক। পরবর্তীতে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদারের দুরদর্শিতার কারণে লটারি বাণিজ্য বন্ধ সহ পুরো মেলা স্থায়ী হয়েছে। যতটুকু জানা গেছে প্রতারক রফিকুল ইসলাম এখন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা মনগড়া বানোয়াট অভিযোগ ও। অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে যা সম্পুর্ন ভিত্তিহীন। কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মেলার প্রকৃত মালিক প্রতারক রফিকুল ইসলামের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles