কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বিমান (উড়োজাহাজ) তৈরি করে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে শামীম রানা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ার ছড়ার হাবিবপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলামের বড় ছেলে শামীম রানা। সে ফুলবাড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
স্কুলছাত্র শামীম জানায়,এক-দেড় বছর ধরে ইউটিউব ও গুগলে সার্চ করে দেখে বিমান তৈরির কাজটি। এর পরেই বিমান তৈরির শুরু করে সে।
শামীমের পরিবার জানায়,অভাব- অনটনে শামীমের বেড়ে ওঠা। প্রথমে কৃষক বাবার কাছে বিমান তৈরির কিছু টাকা আবদার করে শামীম। কিন্তু বাবা-মা ছেলেকে বলতেন ‘এখন পড়াশুনা করার সময়। ভালো করে পড়াশুনা করো’।
কিন্তু পরে ছেলের আবদার পুরন করতে বাবা-মা টাকা দেন। শামীম সেই টাকা নিয়ে বিমান তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রাখে। ইন্টারনেট ঘেঁটে-ঘেঁটে সে ককসিট দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে বিমান তৈরি করে। পরে তার দীর্ঘ চেষ্টায় তৈরিকৃত বিমানটি সফলভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে আকাশে উড়িয়ে দেখে। এখন বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ার ছড়ার বাসিন্দাদের মুখে মুখে আলোচনার বিষয় হয়ে পড়েছে তার বিমান বানানোর কথা।
স্কুলছাত্র উদ্ভাবক শামীম রানা জানান, তার বিমানটি বাংলাদেশ বিমানের আদলে তৈরি করা। ককসিটে তৈরি মূল বিমানটির লম্বায় ৫৬ ইঞ্চি। আর দু’পাশের ডানা ৫০ ইঞ্চি লম্বা। ওজন ১ কেজি ৩০০ গ্রাম। এই বিমানে ৯৪০ গ্রাম ওজনের ২টি ব্রাশলেস ড্রোন মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত বিমানটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে গতি কমানো -বাড়ানো, ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্তমানে ওই বিমানটি তিন কেজি ওজন বহন করতে পারে।
শামীম জানায়, বিমান তৈরিতে এ পর্যন্ত তার ১৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিমানটি আকাশে টানা সর্বোচ্চ ১০ মিনিট উড়তে পারে। বিমানটির নাম দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (অচিন পাখি)। এই বিমানটি হাফ কিলোমিটার রেঞ্জে চলতে পারে। তবে রেঞ্জ আরও বাড়ানো সম্ভব। টাকা জোগাড় হলে বিমানটিতে ১ থেকে ২ জন মানুষ নিয়ে চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হবে।
ভীষণ আস্থার সাথে শামীম দাবী করে, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চীন ও আমেরিকার মতো উন্নত প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন প্লেন বানাতে পারবে সে। তার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিমান তৈরি করা। এ জন্য সবার দোয়া কামনা করেছে শামীম।
শামীম রানার বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, তারা শিক্ষার স্বাদ না পেলেও ফুলবাড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শামীম তা পেয়েছে।
শহিদুল ইসলাম আরো জানান,শামীম বিমান তৈরি করবে বলে টাকার জন্য আমাকে চাপ দিতো। প্রথমে আমি নিষেধ করেছি। জানতে চাই,তুমি কিভাবে বিমান তৈরি করবে? কিন্তু নাছোড়বান্দা শামীমের শুধু টাকা চাই। পরে অনেক কষ্টে তাকে টাকা দিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে ৯ মাস পড়াশুনার পাশাপাশি বিমানটি তৈরি করেছে। এখন আমার ছেলের তৈরি করা বিমানটি আকাশে উড়ছে। বিমানটি দেখতে প্রতিদিনেই বাড়ীতে মানুষে ভীড় জমে। এখন সত্যি খুবই ভালো লাগছে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।
ওই গ্রামের সিয়াম আমিনুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান বলেন,শামীম রানা যা করেছে,আমাদের জন্য তা অচিন্তনীয়। সে নিজেই তৈরি করেছে বিমান। তার তৈরিকৃত বিমানটি যখন আকাশে উড়তে দেখি তখন আমাদের অনেক আনন্দ লাগে। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।
ছিটমহলের আন্দোলনের সাবেক নেতা আলতাফ হোসেন ও নুর আলম সরকার বলেন, অসাধারণ প্রতিভা থাকায় শামীম রানা একটা বিমান তৈরি করে আমাদের বিলুপ্ত ছিটমহলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে আরও বড় কিছু করে দেখাতে পারবে বলে আশা করি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, এক স্কুলছাত্র একটি বিমান তৈরি করেছে বিষয়টি জানি। নিঃসন্দেহে একটা ভালো কাজ করেছে। এটা ফুলবাড়ীর গর্ব। তার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনে তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দেন ইউএনও।