ফুলবাড়ীতে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর হালচাষ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গরুর হালচাষ হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তি ঘটেছে মহিষের হালচাষ। কৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতনঐতিহ্য লাঙ্গল, জোয়াল, দয়ি, প্যান্টি আর মইয়ের গরু হালচাষ।

 জানা যায়,প্রান্তিক চাষিদের জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপণের জন্য জমি চাষের আগে গরুর মহিষের হাল ব্যবহার করা হতো। আর ওই মাটি মাড়িয়ে সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হতো। দরি আর প্যান্টি(ছোট লাঠি) দিয়ে নিয়্ত্রণ করা হতো হালের পশুকে। কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত গরু কিংবা মহিষের হাল চাষ ঐতিহ্যবাহী ছিলো তিন-চার যুগ আগেও।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল-জোয়াল, মই, গরু ও মহিষ। কিন্তু এখন আর দেখা যায় না কৃষকের কাঁধে লাঙ্গল- জোয়াল, হাতে জোড়া গরুর দড়ি- এটাই ছিল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য অথচ আজ আধুনিক কৃষি যন্ত্রের আধিপত্যে বিলুপ্তির পথে গরুর হাল। মহওষের হাল তো দেখাই যায় না।

দেশের উত্তরের জেলার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেষা নাওডাঙ্গা, ‍শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী, বড়ভিটা, ভাঙামোড়সহ কাশিপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে পেশা হিসাবে বেঁছে নেওয়া কোন কোন  কৃষক বাপ দাদার রেওয়াজ অনুযায়ী গরু দিয়ে জমিতে হালচাষ করছেন। এরমধ্যে রমাকান্ত রায় (৫৮) মনভোলা রায় (৫২) জানালেন, ছোটবেলা থেকে হাল চাষের কাজ করে আসছি। হালচাষের চাষের জন্য দরকার ১ জোড়া বলদ গরু, কাঠ আর লোহার সমন্বয়ে তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, মই, পান্টি, গরুর মুখের লাগাম ইত্যাদি। আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে সেই জমিতে ঘাস কম হতো। জমির উব্বরতা বাড়ে।

তারা জানান, সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত হালচাষ করলে জমির মালিকদের দিতে হয় ৫০০ টাকা। এভাবে তারা বাপ-দাদার পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন।

কুরুষাফেরুষা গ্রামের কৃষক আব্দুল সাত্তার খন্দকার (৭০) জানান, তাদের এলাকায় জমিতে এক সময় হালচাষ হতো গরু ও মহিষের হাল দিয়ে। তাদের প্রত্যেকের বাড়ীতে ৪ থেকে ৫ জোড়া গরু ও মহিষের হাল ছিল। এছাড়াও আগে প্রায়  প্রতিটি বাড়িতে গরু ও মহিষ লালন-পালন করা হতো। গরুগুলো যেন পরিবারের একেকটা সদস্যের মতো। তাজা ঘাস আর ভাতের মাড়, খৈল-ভুসি ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলা হালের জোড়া বলদ দিয়ে জমি চষে বেড়াতেন কৃষক।

নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান, আগে হাল চাষের মৌসুমে তাদের কদর ছিল অনেক। কাকডাকা ভোরে কৃষকরা গরু, লাঙল, জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে যেত মাঠের জমিতে হালচাষ করার জন্য। কিন্তু আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কারের  ফলে হালচাষ বিলুপ্তির পথে, এখন মহিষের হাল তো দেখাই যায় না।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ নিলুফা ইয়াছমিন জানান, গরু দিয়ে হাল চাষ আমাদের দেশের একটা ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে অনেক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে জমি চাষ করতে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার ব্যবহার হচ্ছে। পাওয়ার টিলার ও  ট্রাক্টর মাটির গভীরে যেতে পারে। এটি দিয়ে জমি চাষ করা ভালো এবং আগের তুলনায় এখন ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

বাংলা প্রেস মিডিয়া তে আপনাকে স্বাগতম। 

আপনার সংবাদ টি দিতে WhatsApp যোগাযোগ করুন = 01715283939

This will close in 20 seconds