অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন,আবু সাঈদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে বর্তমান প্রজন্ম। মানুষ পেয়েছে বাকস্বাধীনতা,সেই সাথে পেয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার।
তাই আবু সাঈদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে যুগ যুগান্তর। আমরা মহাকাব্য পড়ে থাকি। আবু সাঈদ হলো সেই মহাকাব্যের নায়ক। ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে অনেক কবিতা, গল্প ও সাহিত্য লেখা হবে। কথাগুলো বলছিলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শনিবার দুপুর ১টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সিন্ডিকেট রুমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আবু সাঈদ চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। তার গুলি খাওয়ার যে ছবি মানুষ দেখলো, এরপর মানুষকে আর থামানো যায়নি। তোমরা দ্বিতীয় বিজয় এনে দিয়েছো। দেশের মানুষ এ বিজয়ের সুফল ভোগ করবে।
এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি শোনেন এবং সেগুলো পূরণের আশ্বাস দেন। ঈদ এখন ঘরে ঘরে। প্রত্যেক ঘরে আবু সাঈদ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান। এখানে হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, খ্রিষ্টান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও যেন কোনো গোলোযোগ যেন না হয়।
কেউ ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা না বলে। কারণ আমরা এই মাটিরই সন্তান, সবাই আবু সাঈদ। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রধান বলেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি। আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছে, আমাদেরকেও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। যারা পার্থক্য করে, এ রকম সন্তান ওরকম সন্তান, এ রকম না।
আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজেই তাকে রক্ষা করতে হবে, তাদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করতে হবে। অন্তবর্তী কালীন সরকার শপথ গ্রহণের পরে পরেই উত্তরের বিভাগ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাসায় যান রাষ্ট্রপ্রধান। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন ।
তিনি আজ শনিবার সকালে হেলিকপ্টার যুগে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মেরিন একাডেমিতে অবতরণ করেন। এরপর সড়কপথে পীরগঞ্জের জাফর পাড়ায় আবু সাইদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে কবর জিয়ারত করেন। কবর জিয়ারতের পর তিনি শহিদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং খোঁজখবর নেন। প্রধান উপদেষ্টা আবু সাঈদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। যে স্বপ্ন নিয়ে আবু সাঈদ প্রাণ দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূস বলেন, আবু সাঈদ এক পরিবারের সন্তান নয়, আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। যে স্বপ্ন নিয়ে আবু সাঈদ প্রাণ দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের। আবু সাঈদ এখন এক পরিবারের সন্তান না। বাংলাদেশের যত পরিবার আছে, তাদের সন্তান। যারা বড় হবে, স্কুল-কলেজে পড়বে, তারা আবু সাঈদের কথা জানবে এবং নিজে নিজেই বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব। আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে।-যোগ করেন তিনি।
কোটার সংস্কারের দাবিতে সারাদেশের মতো রংপুরেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ এর ১৬ই জুলাই মৃত্যু হয়। নিহতের কবর জিয়ারত শেষে তার বাবা-মা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তার হত্যার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
পরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ রংপুর অঞ্চলের মানুষ তার আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই মন্তব্য করছেন এই এই অন্তবর্তী কালীন সরকার প্রধান কে দিয়ে সংস্কার করা সম্ভব। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রধানের আগমন উপলক্ষে ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও সেখানে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়নি।পরে প্রধান উপদেষ্টা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
এ সময় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম,আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া,রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জাকির হোসেন,জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান,জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকতারা-সহ সকল সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ১৬ই জুলাই কোটাসংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ।