ফুলবাড়ীতে হাজার হাজার মানুষজন পানিবন্দি

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধলরা বেষ্টিত ৪টি ইউনিয়নে উজানের পাহাড়ী ঢল ও কাঁদা মিশ্রিত পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ৪ হাজার ৫২০ জনের পানিবন্দির খবর জানিয়েছে।

চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এদিকে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পয়েন্টে( তালুক শিমুলবাড়ী) ধরলার পানি বিপদসীমার ৩৮ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পরেছে বানভাসি মানুষ। অনেকে ছুটছেন নিরাপদ স্থানের খোঁজে। অনেকেই মাচা ও টং তৈরি করে রাত্রিযাপন করছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও এখনো সবার কাছে পৌঁছেনি সহায়তা। গো-খাদ্যের অভাবে গরু, ছাগল, ভেড়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে বানভাসি মানুষজন। বিশেষ করে ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে পরিবারের লোকজন আতংকগ্রস্থ।

এছাড়াও উপজেলার বড়ভিটা বাজার দিয়ে বড়ভিটা উচ্চ বিদালয় যাওয়ার রাস্তাটি একহাটু পানিতে তলিয়ে গেছে।

বর্তমানে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে উপজেলার বস্তি গোরকমন্ডল, চর-গোরকমন্ডল, যতিন্দ্রন্রায়ন, চর-যতিন্দ্রনারায়ন, সোনাইকাজী, পশ্চিম ও পূর্ব ধনিরাম, দক্ষিণ বড়ভিটা, চর-বড়লই, মেকলি, হাজির বাজার, বাংলা বাজার, খোচাবাড়ী ও রাঙ্গামাটি এলাকা।

পানির তোড়ে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল বাঁধ থেকে আনন্দ বাজার যওয়ার একমাত্র রাস্তাটির উপর নির্মিত মুজিব কেল্লার পাশের সেতুটির উত্তর দিকে ডেবে গেছে এবং ধসে য়াচ্ছে রাস্তার মাটি। ফলে হাজার হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের অশংকায় রয়েছে।

বড়ভিটা ইউপি সদস্য শাহ আলম জানান, বন্যায় গরু বাছুর নিয়ে খুব বিপদে আছি। বর্তমানে পানিতে রয়েছে। গো-খাদ্যের খুবই সংকট। ঠিকমতো খাবার দিতে পারছি না।

ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ সুমন কান্তি সাহা জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত এলাকার জন ৭ টা মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক ভাবে খোলা রয়েছে। ৬ হাজার পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও ১ হাজার খাবার স্যালাইন বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়ন ক্লিনিকে পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুত রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চলমান বন্যায় ২৬০ হেক্টর ফসলি জমিন নিমজ্জিত হয়েছে। বিশেষ করে পাট, রোপা আমন বীজতলা, আউশ ধান, শাকসবজি, তিল, তিসি, চিনা, কাউন ফসল তলিয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত খোজঁ খবর রাখা হচ্ছে। তবে কিছুদিন এভাবে পানি জমে থাকলে বীজতলাসহ ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বন্যা কবলিত মানুষের জন্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন থেকে ২১ মেঃ টন চাল ও ১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত।

বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু জানান, তার ইউনিয়নের ৫টি মৌজার মানুষজন বন্যায় আক্রান্ত। পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ৩/৪ হাজার মানুষ। সাধ্যমত চেষ্টা করছি তাদের পাশে থাকার।

ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছি। নিজেরাও ঘুরে ঘুরে দেখছি। বন্যা কবলিত সকল পরিবারকে আমরা খাদ্য সহায়তা প্রদান করছি। যতদিন বন্যা থাকবে ততদিন বরাদ্দ সাপেক্ষে সহায়তা অব্যাহত রাখব।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles