ফুলবাড়ীর ফাতমার জোটেনি কোন ভাতা কার্ড

বয়সের ভার হাটতে পারছেন না ফাতেমা। বয়স তার ৭০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রস্কাতুতকারী তার বয়েস কমপক্ষে ১০ বছর কমিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন এলাকার লোকজন। তারই মারপ্যাচে বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত হন ফাতেমা।
আর চেয়ারম্যান মেম্বার আর সমাজসেবা অফিসের অবহেলায় বাদ পড়েন বিধবা ভাতা থেকেও।

ফাতেমা দুরের কাউকে চিনতে পারেন না। কাছের লোকদের অচেনা লাগে। চোখ বড় বড় হলেও লালচে হয়ে গেছে চোখের রং। কোমর হেলে হাঁটেন। পড়নের কাপড়টি ছেঁড়াফাঁড়া। শক্তি নই শরীরে। লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। দু’মুঠো ভাতের জন্য হাঁটতে হয় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। যেদিন ভিক্ষা পায় সেদিন ভাত জোটে। না হলে মেয়ে জামাইয়ের কাছে ধর্নাণা দেন।

অথচ সরকার ব্যাপক হারে বিধবা ও বয়স্ক ভাতা দিলেও অসহায় ফাতেমার ভাগ্য জোটনি কোনো ভাতা-ই।

ফাতেমা সারাদিন ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্যের কাজ শেষে মাথা গুজাঁর ঠাই পেয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজলার গোরুকমন্ডল আবাসনে।ফাতেমা বেগম (৬২,এনআইডি অনুসারে) গোরকমন্ডল গ্রামর মৃত ছোবহান আলীর স্ত্রী।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম ফাতেমা বেগমের। দুইবোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। হতদরিদ্র পিতামাথার সংসারে বেড়ে উঠায় দেশ স্বাধীনতার পূর্বে অল্প বয়সে পাশের গ্রামের ধরলার চরের ছোবহানের সঙে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর সংসার জীবন কিছু দিন কেটে যায় ভালোই। এর মধ্যে হঠাৎ ধরলার ভাঙ্গনে ফাতেমার বাড়ী ভিটা বিলীন হয়। অন্যের জায়গায় ঠাঁই নিয়ে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছিল তার।

এরই মধ্যে ফাতেমার জীর্ণশীর্ণ ঘরে আসে আপিনা নামের কন্যা সন্তান। এরপর স্বামীর মত্যু হলে ভিক্ষা-ই হয় একমাত্র উপার্জনের পথ। ভিক্ষা করে,ঝিগীরী করে অনেক কষ্টে মেয়ের বিয়ে দেন ফাতেমা।

পরে ফাতেমা কি খান না খান কেউ খোঁজ রাখেননি। মায়ের দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বছর কয়েক পরে মেয়ে আপিনা ও মেয়ে জামাই মোন্নাফ তাদের অবাসনের ঘরে তাকে থাকেত দেয়। মেয়ে ও জামাইসহ তিনি বহুবার মেম্বার চেয়ারম্যানর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পাননি কোন ভাতা। যেখানই গিয়েছেন সবাই বলেছেন পরে আসেন, দেখা হবে।
ফাতেমা পরে যান, আর ফিরে আসেন। আবার যান, আবার ফিরে আসেন। ভাতা আর মেলে না!

খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে মেয়ে জামাইয়ের উছুলায়ে ফাতেমা বেগম গোরকমন্ডল আবাসন প্রকল্পর একটি ঘর পান।

ফাতেমা বলেন,’মোর কোনো কাট নাই। মুই বাইচপার চাং বাহে!’

ফাতমার মেয়েজামাই মোন্নাফ আলী জানান, জনপ্রতিনিধিদের কাছে কাছে ঘুরেও বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার তালিকায় নাম ঢুকাতে পারেননি তারা।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, বরাদ্দ কম। চাহিদা বশি। ফাতেমা বেগমের ভাতা আছে কি না জানা নেই। তার পরেও খাঁজ খবর নিয়ে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

উপজলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম জানান, তিনি(ফাতেমা) অনলাইনে আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles