রংপুরে জ্বালানি ছাড়াই চলছে বাইক  

হঠাৎ করেই রাস্তায় চোখে পড়লো এই চার চাকার বাইকটি। তেল-গ্যাস বা বৈদ্যুতিক চার্জ ছাড়াই এটি তৈরি করেছেন রংপুর নেসকোর এক কর্মচারি। রাস্তায় হরহামেশাই অন‍্য সব বাইকের মত চলাচল করছে এই যানটি। তাহলে আপনাদের মনে প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে চলছে এই বাইকটি? বাইকটির চাকা চলার সঙ্গে সঙ্গে ডায়নামার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হবে ব্যাটারিতে।

আজ বুধবার সকালে সরজমিনে গিয়ে জেলা পরিষদের গেটের সামনে বাইকটি দেখার পর উদ্ভাবক মাসুদ রানার সাথে দেখা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে পড়েছিলাম পঙ্গু অবস্থায় বিছানায়। আমাকে ঘর থেকে বের করে নেয়া যাওয়ার জন্য একজন লোক প্রতিনিয়ত সাথে থাকতো। এতে করে নিজে নিজেকে প্রায় সময় বিরক্ত মনে হতো।  এই চিন্তা-চেতনার জায়গা থেকে। চার বছর  রিচার্জ করে

বিভিন্ন টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করেছি এই বাইক।

তিনি আরও বলেন, এক সময় অনেকেই আমাকে আমার এই বাইক তৈরি দেখে পাগল বলতো। যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তার মাথা পাগল হয়ে গেছে।  আর যখন আমার লক্ষ্য উদ্দেশ্যে পৌঁছে গেছি তখন তারাই বলছে । আমরা যা ভাবতাম তা নয়। বাংলাদেশে এমন যদি কিছু সংখ্যক লোক থাকে তাহলে বাংলাদেশের পণ্য বাংলাদেশেই উৎপাদন করা সম্ভব হবে এমনটা বলেছেন তারা।

নিজস্ব প্রযুক্তিতে এই বাইকটি তৈরি করেছেন রংপুরের উপশহর লাকিপাড়ার বাসিন্দা ও নেসকো কোম্পানীতে চাকরিরত মাসুদ রানা। তিনি জানান, ধোঁয়াবিহীন শতভাগ পরিবেশবান্ধব ও কোনো ধরনের জ্বালানি খরচ ছাড়াই যাওয়া যাবে দেশের যেকোনো প্রান্তে। যার চলার গতি হবে ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি।

উদ্ভাবক মাসুদ রানা জানান, বাইকটি বাজারজাত করতে পারলে জ্বালানি সংকট অনেকটাই কমে আসবে। আর সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে এই বাইক উৎপাদনও করতে চান তিনি।

তেল-গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক চার্জ ছাড়াই চলা এই কোয়াড বাইকটি তৈরি করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন এক চাকরিজীবী। নিজের প্রচেষ্টায় যে অনেক কিছু করা সম্ভব তারি উদাহরণ এটি।

দিনাজপুর থেকে দেখতে আসা মমিনুল ইসলাম বলেন,  জ্বালানি খরচ ছাড়াই বাইক যদি বাংলাদেশে উৎপাদন করা যায় তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পণ্য বাংলাদেশেই বাজারজাত করলে আরো এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

মোসলেম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জেলা পরিষদের সামনে হেঁটে যাওয়ার সময় তার চোখে পড়ে এই বাইকটি। তিনি বলেন, বাইরের দেশে তেল ও গ্যাসবিহীন এইরকম বাইক অ্যাভেলেবেল চলছে। বাংলাদেশের মতো জায়গায় রংপুরে এরকম বাইক দেখে খুব ভালো লাগছে। তবে এটি বাণিজ্যিকভাবে যদি করা যায় তাহলে আমরা যারা স্বল্প আর মানুষ আছি কিনতে পারব।

আহসান হাবীব মিলন বলেন,জেলা পরিষদের পেছনে বিদ্যুৎ অফিসের আদালত, আদালত চত্বরে এসে বাইকটি দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। কোন জ্বালানি ছাড়াই রোডে চলছে এই বাইকটি। এই বাইকটি তৈরি করতে গেলে বিদেশ থেকে কোন পারস আনতে হয় না। সবকিছু পার্টস বাংলাদেশ থেকেই নিয়ে জ্বালানি বিহীন উৎপাদন করা সম্ভব।

এমন আবিষ্কার রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। তার আবিষ্কৃত মোটরসাইকেলটি দেখতে প্রতিদিন উৎসুক জনতা ভিড় করেন বাসা এভং অফিস প্রাঙ্গণে। তার এই বাইক আবিস্কারে খুশি সহকর্মী এবং স্থানীয়রা।

৫ বছর আগে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন মাসুদ রানা । তারপর দূর্ঘটনা রোধে এই চার চাকা বিশিষ্ট বাইক আবিস্কারের চিন্তা করেন তিনি। তার এই বাইকটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা।

বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধান কার্যালয়ের

উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এই বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।  এই বাইক বাজারজাত করলে সাধারণ মানুষের উপকার কতটুকু হবে।  পাশাপাশি কতটা পরিবেশ বান্ধব হিসেবে বাজারজাত করা যাবে। তবে আমাদের এসব বাইক অনুমোদনের জন্য টাইপ অনুমোদন শাখা রয়েছে। বাংলাদেশে কোন ধরনের জ্বালানি ছাড়াই  ব্যাটারি চালিত বাইক অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি সেটি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।  তবে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে গেলে অবশ্যই  অনুমোদন নিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, বাইরের দেশে দীর্ঘদিন থেকে  জ্বালানি ছাড়াই চলছে এইসব বাইক।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles