শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেছেন, আগামীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবসহ এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ বিশ্ববাজারে আমাদের পণ্যের প্রচার-প্রসারের জন্য উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পেটেন্ট ও মান নিশ্চিতকরণ জরুরি। এ বিবেচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও), পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) এবং বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) এর দায়িত্বশীল ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ হোটেল হলিডে ইন এর ইলিশ কনফারেন্স হলে এসএমই ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় রিভলভিং ফান্ড হতে ৩য় দফায় ঋণ বিতরণের উদ্দেশ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব এসব কথা বলেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তৃতা করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আবদুর রহমান খান এফসিএমএ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন মাহমুদ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সভাপতি ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম।
সিনিয়র শিল্প সচিব বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিল্পবান্ধব নীতিকাঠামো ও যথাযথ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে টেকসই শিল্পায়নের পথে আমরা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ১১২.২৪% বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে, বিগত ৬৩ বছরের মধ্যে এ বছর সর্বোচ্চ ২৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৩০ মে. টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, এ বছর প্রায় একর প্রতি ১৭ মে. টনের স্থলে ৮২ মেট্রিক টন পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে আখ উৎপাদন হওয়ায় প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি বেশি উৎপাদন হয়েছে এবং চামড়া শিল্পে ১.২৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। বিগত ২০০৯-২০২৩ সময়ে এ মন্ত্রণালয় হতে ১৭টি আইন, ২৩টি নীতিমালা, ১২টি বিধিমালা ও ৬টি গাইডলাইন প্রণয়ন ও হালনাগাদ করা হয়েছে।
বিশেষ অতিথি বলেন, ‘ক্রেডিট হোলসেলিং’- এর মতো একটি বিশেষায়িত কর্মসূচির মাধ্যমে এসএমই ফাউন্ডেশন ২০০৯ সাল হতে সিএমএসএমইদের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে আসছে। সিএসএমই খাতের আর্থিক সংকটাপন্ন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পুনর্জীবনে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজের ৩০০ কোটি টাকা বিতরণ সম্পন্ন হলে উক্ত অর্থ হতে প্রত্যাবর্তনকৃত অর্থ দ্বারা একটি রিভলভিং ফান্ড গঠন করা হয়। রিভলভিং ফান্ড হতে ২য় দফায় ২০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩০ জুন-২০২৩ পর্যন্ত ২৯৪ কোটি টাকা ২,৯৭৮ জন উদ্যোক্তার অনুকূলে বিতরণ করা হয়। যেখানে নারী উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ঋণ বিতরণের হার ২৫% এবং ম্যানুফেকচারিং ও সার্ভিসখাতে ঋণ বিতরণ ৭৫%। রিভলভিং ফান্ড হতে ৩য় দফায় ঋণ বিতরণের উদ্দেশ্যে আজ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিভলভিং ফান্ড হতে ঋণ বিতরণ এসএমই খাতকে আরো উজ্জীবিত করবে এবং এর মধ্য দিয়ে ফাউন্ডেশন নতুন উদ্যমে সিএমএসএমই অর্থায়নে নিজেদের স্বকীয়তার পরিচয় রেখেছে।
উল্লেখ্য, এসএমই ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় রিভলভিং ফান্ড হতে ৩য় দফায় ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন উদ্যোক্তারা। অর্থ বিভাগের নতুন পরামর্শ মোতাবেক এই ঋণের সুদের হার হবে মাত্র ৬%। এ লক্ষ্যে ২৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন অংশীদার ১৯টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীগণ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।