মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত দেশের খাদ্য সংকট দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে – মন্ত্রী

 

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, দেশের খাদ্য সংকট দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত। খাদ্য ও প্রাণিজ আমিষের যোগান আসে এ খাত থেকে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও ভূমিকা রাখছে এ খাত। বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মাছ রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ থেকে মাংস রপ্তানিরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ বিদেশে বাংলাদেশের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এজন্য রোগ মুক্ত গবাদিপশুর অঞ্চল তৈরি করে আমরা মাংস রপ্তানির প্রক্রিয়ায় রয়েছি। এভাবেই সাম্প্রতিককালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। এ উন্নয়ন দৃশ্যমান উন্নয়ন, এ উন্নয়ন কথার ফুলঝুড়ি নয়, এ উন্নয়ন বাস্তবসম্মত উন্নয়ন। এ উন্নয়নের একটি বড় অংশীদার গণমাধ্যমকর্মীরা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত বিকশিত হওয়ার অনেক পথ ও পন্থা দেখিয়েছে গণমাধ্যম।

 

বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরাম (এফএলজেএফ) প্রকাশিত ‘এফএলজেএফ ভয়েস’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল ও মো. আব্দুল কাইয়ূম, যুগ্মসচিব ও মন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার, ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি এম এ জলিল মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম সুমনসহ ফোরামের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্ত্রী আরও বলেন, বিগত ১৫ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৮২ শতাংশ। এটি বিস্ময়কর। এক সময় বলা হতো মাছের আকাল, মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ যেগুলো একসময় বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো এখন সবখানে পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমরা অর্জন করেছি। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৯ দশমিক ১৫ লাখ টন লাখ মেট্রিক টন, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট উৎপাদনের চেয়ে প্রায় ৮২ শতাংশ বেশি। মাছ উৎপাদনে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে ৩য়, চাষের মাছ উৎপাদনে ৫ম এবং ইলিশ আহরণে ১ম স্থানে রয়েছে।

 

মন্ত্রী আরও বলেন, জনসাধারণের জন্য নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় আন্তর্জাতিকমানের টেস্টিং ল্যাবরেটরি করা হয়েছে। ফলে দেশের মানুষের খাবারের জন্য মাছ সুস্বাদু ও নিরাপদ হবে এবং বিদেশে রপ্তানির মাছও নিরাপদ হবে। ফলে মাছ রপ্তানিতে মানসম্পন্ন জায়গায় আমরা পৌঁছুতে পেরেছি। নিরাপদ মাছ উৎপাদনের জন্য মৎস্য ও পশুখাদ্য আইন, ২০১০ ও মৎস্য ও মৎস্যপণ্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ আইন, ২০২০ করা হয়েছে।

 

তিনি আরও যোগ করেন, সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সামুদ্রিক মাছের টেকসই আহরণ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের সমুদ্রসীমায় মৎস্য নৌযান মনিটরিং, কন্ট্রোল ও সার্ভিল্যান্স জোরদারকরণে ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জয়েন্ট মনিটরিং সেন্টার। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৫০০টি আর্টিসনাল মৎস্য নৌযান ও ৫টি বাণিজ্যিক মৎস্য নৌযান প্রযুক্তিভিত্তিক ভেসেল মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে। সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ‘গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

 

প্রাণিসম্পদ খাতের অর্জন তুলে ধরে এসময় মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দুধ উৎপাদনের পরিমাণও পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ১৫ বছরে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে প্রায় ৫ গুণ, ৭ গুণ এবং ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতের খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, উপকরণ সহায়তা প্রদান ও সহজ শর্তে সরকার ঋণ প্রদান করছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রাণিচিকিৎসা খামারির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের ৬১ টি জেলার ৩৬০টি উপজেলায় মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। ফলে অসুস্থ প্রাণিকে এখন হাসপাতালে নিতে হয় না, হাসপাতাল প্রাণির কাছে চলে যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের ফলে কোরবানির সময় এখন পাশ্ববর্তী দেশের ওপর নির্ভর থাকতে হয় না বরং উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে কোরবানির হাটে গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকছে।

 

শ ম রেজাউল করিম আরও যোগ করেন, দেশে চিড়িয়িাখানা পরিচালনার জন্য কোনো আইন ছিলনা। সম্প্রতি চিড়িয়াখানা আইন সংসদে পাশ হওয়ায় দেশের চিড়িয়াখানার আইনগত ভিত্তি তৈরি হয়েছে।দেশে ডেইরি খাতের জন্য ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড ছিল না। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্যে সরকার আইন প্রণয়ন করেছে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles


Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home11/onzcfyam/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464