সেমিফাইনালে আর ভুল করতে চায়না দক্ষিণ আফ্রিকা

 

বিশ্বকাপের নক আউট পবে ‘চোকার্স’ তকমা থেকে এবার অন্তত বেরিয়ে আসতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামীকাল পুরনো প্রতিদ্বন্দি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচটি সে কারনেই বাড়তি এক উদ্দীপনা যোগাচ্ছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা প্রোটিয়াদের।

এর আগে বিশ্বকাপে চারবার ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১৫ সাল সেমিফাইনালে খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু কোনবারই ফাইনালের টিকেট পায়নি, এর মধ্যে দুইবার হেরেছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে এজবাস্টনে নাটকীয়ভাবে অস্ট্রেলিার কাছে পরাজিত ম্যাচটি এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে। ম্যাচটি টাই হলেও গ্রুপ পর্বে এগিয়ে থাকার কারনে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ী ঘোষনা করা হয়।

আট বছর আগে সেন্ট লুসিয়ায় মাত্র ১৪৯ রানে গুটিয়ে যাবার পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে পরাজিত হয়ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে ৯টি ম্যাচে সাতটিতেই জয়ী হয়ে দুর্দান্ত দাপটের সাথে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা দক্ষিণ আফ্রিকা কালকের ম্যাচের আগে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পেতেই পারে। শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪২৮ রান করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়া ছাড়াও এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রানের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল টেম্বা বাভুমার দল।

সর্বশেষ চার মোকাবেলায় প্রতিটিতেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ী হয়েছে প্রোটিয়ারা। এর মধ্যে চার সপ্তাহ আগে গ্রুপ পর্বে ১৩৪ রানে জয়ী হবার ম্যাচটিও রয়েছে।

সাত ম্যাচে ১৮ উইকেট দখল করা দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার জেরাল্ড কোয়েতজি বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে এবারের বিশ্বকাপে খেলেছি তাতে এখানে আসাটা অকল্পনীয় কোন বিষয় ছিলনা।’

অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচে পরাজয়ের পর টানা সাত ম্যাচে জয়ী হয়ে সেমিফাইনালে খেলতে এসেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এই জয়গুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটির কথা আলাদা করে বলতেই হয়। মাত্র ৯১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পরও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ২০১ রানের অভাবনীয় ইনিংসে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার রাসি ফন ডার ডুসেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৭৬ রান করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৪৪২ রান সংগ্রহ করেছেন। ডুসেনও অতীতের হতাশা কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, ‘১৯৯৯ সালে আমার বয়স ছিল ১০ বছর। ঐ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ জয়ের দারুন সুযোগ ছিল। আমি মনে করি এবারও আমাদের সেই সুযোগ আছে।’

লেগ-স্পিনার তাবরিজ শামসি বলেছে অতীত সবসময় সবকিছু প্রমান করে না। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দলটি ভিন্ন আমেজের একটি দল। এখানে খেলোয়াড়রাও ভিন্ন। বিশ্বকাপে আসার আগে কেউই বলেনি আমরা সেমিফাইনালে খেলবো, কিন্তু আজ আমরা সেখানে পৌঁছেছি। এটাই এই দলের মান। চাপে থাকা সত্তে¡ও আমরা বুঝতে পেরেছি বিশেষ কিছু করে দেখানোর এটাই সেরা সুযোগ। কখনই বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, এ কারনেই এই সুযোগটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে আমাদের কোন দল যা করতে পারেনি আমরা সেটা করে দেখাতে চাই।’

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ট্রাভিস হেড জানিয়েছেন, সামনের চ্যালেঞ্জ তারা উৎরে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হেড বলেন, ‘এই ছেলেগুলো অনেকদিন দলে একসাথে আছে। যে কারনে দীর্ঘদিন ধরে আমরা নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যে পরিশ্রম করেছি তার শেষটাও যেন ভাল হয় সেই প্রত্যাশাই করছি। আমি নিশ্চিত প্রত্যেকের চিন্তায় এখন একটিই বিষয়, ফাইনালে খেলা। যদিও পুরো দলের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে খুব বেশী আলোচনা হয়নি। কিন্তু আমরা জানি এই টুর্নামেন্টের শেষটা কিভাবে ভাল করতে হবে।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে আক্রান্ত হবার কারনে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক বাভুমার ফিটনেস নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ছিল। অসুস্থতার কারনে গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচে খেলতে পারেননি বাভুমা। কিন্তু গতকাল ইডেনের নেটে তাকে অনুশীলন করতে দেখে সব শঙ্কা দুর হয়ে গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং এবারের বিশ্বকাপে সকলের বাড়তি নজড় কেড়েছে। বিশেষ করে ওপেনার কুইন্টন ডি কক যেভাবে একের পর এক বড় ইনিংস খেলে নিজেকে প্রমান করেছেন তাতে তার প্রশংসা করতেই হয়।গ্রুপ পর্ব শেষে ভারতীয় ব্যাটার বিরাট কোহলির সর্বোচ্চ ৫৯৪ রানের পর ৫৯১ রান নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ডি কক। বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী ডি কক। ইতোমধ্যেই এবারের আসরে করে ফেলেছেন চারটি সেঞ্চুরি। এর মধ্যে একটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

যদিও রান তাড়া করার সমস্যা প্রোটিয়াদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারত ও নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজিত ম্যাচ দুটিতেই পরে ব্যাটিং করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এদিক থেকে রান তাড়া করার ব্যপারে শতভাগ সফল ছিল অস্ট্রেলিয়া। আফগানিস্তানের সাথে ম্যাক্সওয়েলের নাটকীয় ইনিংসের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩০৬ রান তাড়া করে ৩২ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচে মিচেল মার্শ অপরাজিত ১৭৭ রানের ইনিংস খেলেছেন।

অস্ট্রেলিয়ান লেগ-স্পিনার এ্যাডাম জাম্পা আসরে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন।

ওপেনিং ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নার দুই সেঞ্চুরিসহ মোট সংগ্রহ করেছেন ৪৯৯ রান। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। বাঁ-হাতি পেসার মিচেল স্টার্ক ও ম্যাক্সওয়েল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে পারেননি। কিন্তু বিশ্বকাপে অষ্টমবারের মত সেমিফাইনালে খেলা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কাল তাদেও দুজনেরই খেলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

কলকাতায় কাল বৃষ্টির পূর্বাভাষ রয়েছে, এমনকি পরেরদিন রিজার্ভ ডে’তে বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles


Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (1) in /home11/onzcfyam/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464

Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (1) in /home11/onzcfyam/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464