এজবাস্টন থেকে গিবস : অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচটি স্মরণীয় ম্যাচ

 

আগামীকাল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাঁচবারের বিশ^ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ^কাপে অতীত ইতিহাস অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রাখলেও দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের আসরের দাপুটে পারফরমেন্স সব হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে পারে।

ক্রিকেটে এই দুই পরাশক্তির মধ্যকার পাঁচটি স্মরণীয় ম্যাচের মুহূর্ত :

এজবাস্টন টাই : ১৭ জুন, ১৯৯৯

বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে সেমিফাইনালে যে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা এখনো পর্যন্ত ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত হয়। বার্মিংহামের এজবাস্টনে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়ান ম্যাচটি টাই হয়। ২১৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শেষ তিন বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল মাত্র এক রানের, হাতে ছিল এক উইকেট। ল্যান্স ক্লুজনার ৩১ রানে ক্রিজে ছিলেন। চতুর্থ বলে ক্লুজনার লং অনে বল পাঠিয়ে এক রান নেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝিতে অপর প্রান্তে থাকা এ্যালান ডোনাল্ড রান আউট হয়ে যান। ম্যাচটি টাই হয়।

অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়রা তখনই মাঠেই উৎসব শুরু করেন। গ্রুপ পর্বে এগিয়ে থাকার কারনে ফাইনাল নিশ্চিত হয় অসিদের। অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ ম্যাচটিকে ক্যারিয়ারের অন্যতম উত্তেজনাকর ম্যাচের তকমা দেন।

ওয়াহ স্পেশাল : ১৬ আগস্ট, ২০০০

এজবাস্টান টাইয়েল এক বছর পর স্টিভ ওয়াহ মেলবোর্ন ডকল্যান্ড স্টেডিয়ামে প্রথম ইনডোর ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছিলেন। প্রথমে ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া মাইকেল বেভানের ১০৬ ও ওয়াহর অপরাজিত ১১৪ রানে ভর করে ৫ উইকেটে ২৯৫ রান সংগ্রহ করে। ফাস্ট বোলার ইয়ান হার্ভে, শেন লি ও স্পিন লিজেন্ড শেন ওয়ার্নের বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিহা ২০১ রানে গুটিয়ে যায়, অস্ট্রেলিয়া ৯৪ রানের জয় তুলে নেয়।

মাত্র ১২ ওয়ানডে ম্যাচ মাল্টি-স্পোর্ট ডকল্যান্ড স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মাঠটি বিগ ব্যাশ লিগের দল মেলবোর্ন রেনেগেডসের হোম গ্রাউন্ড।

গিবস মহাকাব্য : ১২ মার্চ, ২০০৬

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার হার্শেল গিবস ১১১ বলে ১৭৫ রানে অভাবনীয় এক ইনিংস খেলে রেকর্ড বইয়ে স্থান করে নিয়েছেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে জোহানেসবার্গের এই ম্যাচে ৯৯.৫ ওভারে ক্রিকেট বিশ্ব ৮৭২ রানের মহাকাব্যিক এক ম্যাচ উপভোগ করেছে।

দ্বিপাক্ষিক সিরিজের নির্ধারনী পঞ্চম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাটিং করে ৪ উইকেটে ৪৩৪ রান সংগ্রহ করে। অধিনায়ক রিকি পরিন্টং ১০৫ বলে ১৬৪ রান করেছিলেন। জবাবে ওপেনিং পার্টনারশীপে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথের ৯০ রানে ১৮৭ রান সংগ্রহ করে। ৩২তম ওভারে গিবস সাজঘরের পথ দেখেন। ঐ সময় প্রোটিয়ারা ৪ উইকেটে ২৯৯ রান সংগ্রহ করেছিল। মার্ক বাউচার ৫০ রানে অপরাজিত থেকে এক বল হাতে রেখে নাটকীয় এক জয় পায়।

কার্যত এই ম্যাচের পর থেকেই ওয়ানডেতে দলীয় রান নিয়ে আর কোন সীমানার কথা কেউ মনে রাখেনি। এরপর থেকেই একের পর এক বড় ইনিংসের ম্যাচ দেখেছে ক্রিকেট ভক্তরা।

অস্ট্রেলিয়ার দাপট : ২৫ এপ্রিল, ২০০৭

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট লুসিয়ায় বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ‘চোকার্স’ উপাধি আরো একবার প্রমান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ঐ আসরে দারুন ক্রিকেট খেলছিল। সেমির পথে তারা স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে।

প্রথমে ব্যাটিং করে প্রোটিয়াদের ইনিংস ১৪৯ রানে শেষ হয়। অস্ট্রেলিয়ান দুই পেসার গেøন ম্যাকগ্রা ও শন টেইট মিলে দুর্দান্ত বোলিং করে ৭ উইকেট তুলে নেন। ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাকগ্রা ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছিল। ম্যাথু হেইডন (৪১) ও মাইকেল ক্লার্ক (৬০*) এর ব্যাটিংয়ে ১১১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

চেজ-মাস্টার মিলার : ৫ অক্টোবর ২০১৬

ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথের সেঞ্চুরি সত্তে¡ও চার বল হাতে রেখে ডেভিড মিলারের অপরাজিত ১১৮ রানে ভর করে ৩৭২ রানের জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটার মিলার আন্দিলে ফেলুকুয়াওর সাথে ১০৭ রানেল অপরাজিত জুটি গড়ে দলকে জয় উপহার দেন। অস্ট্রেলিয়ান বোলার এ্যাডাম জাম্পা ও মিচেল মার্শকে পাত্তাই দেননি মিলার।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles