শেষ অ্যাশেজের তাজা স্মৃতি নিয়ে আগামীকাল পুরানো শত্রু ইংল্যান্ডকে হতাশাজনক ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিযানের ইতি টানতে চায় অস্ট্রেলিয়া।টানা চার জয়ের স্বাদ পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম আহমেদাবাদে খেলতে নামবে ইংল্যান্ড। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে।
দশ দলের চলমান বিশ^কাপে ৬ ম্যাচে ১টি জয় ও ৫টি হারে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। গাণিতিকভাবে অলৌকিক কিছু ঘটলেই কেবলমাত্র সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা আছে জশ বাটলারের নেতৃত্বাধীর ইংলিশ দলটির। অসিদের কাছে হারলে ২ ম্যাচ বাকী থাকতেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হবে ইংল্যান্ডের।
দলের দুই প্রধান খেলোয়াড় গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শকে ছাড়াই মাঠে নামবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের কাছে ১শ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে ইংল্যান্ড। ঐ হারের পর দলের বাজে ব্যাটিং লাইন-আপ এবং ড্রেসিংরুমের অস্থিরতার বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন ইংলিশ কোচ ম্যাথু মট।
তবে মটকে নিয়ে করা সমালোচনার সাথে একমত নন ইংল্যান্ডের ওপেনার ডেভিড মালান। তিনি মনে করেন, বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়ে গেছে ২০১৯ চ্যাম্পিয়নদের। টানা হারে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে খেলোয়াড়দের।
বিবিসিকে মালান বলেন, ‘শুধুমাত্র মটির(কোচ মট) উপরই দায়িত্ব বর্তায় না। আমরা যখন খেলতে নামি, তখন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদেরই পুরো দায়িত্ব নিতে হয়। পারফর্ম করার জন্য যা যা করা দরকার সব কিছুই আমাদের দেওয়া হচ্ছে। সুযোগ-সুবিধা এবং কাজ, সবকিছু আগের মতোই দেওয়া হয়েছে।’
মালান আরও বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণরুপে বুঝিয়ে বলা সত্যিই কঠিন। আমরা এই মুহুর্তে কোন ছন্দ বা ভালো অবস্থায় নেই। আমরা এমন পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত নই।’
বিশ^কাপে ইংল্যান্ডের একমাত্র জয়টি এসেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। আফগানিস্তানের কাছে হারের পর সর্বশেষ দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয় ইংলিশরা। শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৫৬ এবং ভারতের বিপক্ষে ১২৯ রানে গুটিয়ে যায় বাটলার-রুটরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারলে শুধুমাত্র বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের দৌড় থেকেই ছিটকে যাবে না, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে ইংল্যান্ড।
পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠেয় ৫০ ওভারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে অবশ্যই শীর্ষ সাত-এর মধ্যে থাকতে হবে ইংল্যান্ডকে।
৩৬ বছর বয়সী মালান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, আমরা এটি করতে পারবো এবং ছেলেরা সেখানে খেলতে চাইবে। আশা করি আমরা ঘুড়ে দাঁড়াবো এবং ভালো অবস্থায় থেকে বিশ্বকাপ শেষ করতে পারবো।’এ বছর টান-টান উত্তেজনাপূর্ণ অ্যাশেজ সিরিজ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজটি শেষ পর্যন্ত -২ সমতায় শেষ হয়।
ওয়ানডেতে এখন অবধি ১৫৫ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড। ৮৭টিতে জিতেছে অসিরা। ৬৩টিতে জয় আছে ইংলিশদের। বিশ্বকাপের মঞ্চেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। ৯বারের লড়াইয়ে অসিদের জয় ৬টিতে ও ইংলিশদের জয় ৩টিতে।
গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের। ম্যাচটি ৮ উইকেটে জিতে ফাইনালে উঠেছিলো ইংলিশরা। শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ইয়োইন মরগানের দল।
বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর দারুনভাবে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টানা চার জয়ে সেমির দৌঁড়ে ভালোভাবেই টিকে আছে অসিরা। গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রেকর্ড ৩০৯ রানের জয় পেয়েছে কামিন্স-স্মিথরা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের দুই সেরা খেলোয়াড়কে পাচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া। গলফ খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন ম্যাক্সওয়েল এবং ব্যক্তিগত কারণে দেশে ফিরে গেছেন মার্শ।
নয়া দিল্লিতে ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ৪০ বলে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্রæততম সেঞ্চুরি রেকর্ড গড়েন ম্যাক্সওয়েল। ইনজুরিতে ম্যাক্সি ছিটকে যাওয়ায় দলে ফেরার পথ সহজ হয়েছে মার্কাস স্টয়নিসের।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ২৫৯ রান তুলেছিলেন মার্শ। ঐ ম্যাচে ১২১ রানের ইনিংসসহ এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ২২৫ রান করেছেন মার্শ।
মার্শের জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলে ফিরছেন ক্যামেরন গ্রিন। ধর্মশালায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ বলের রোমাঞ্চকর জয় পাওয়া ম্যাচে মার্নাস লাবুশেন ১৮ রান করা সত্ত্বেও দলে জায়গা ধরে রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মিডল অর্ডার ব্যাটার লাবুশেন জানিয়েছেন, ইংল্যান্ড এখনও ‘বিপজ্জনক’ দল এবং এই মুহূর্তে তারা কেমন পারফরমেন্স করছে সেটি দেখে নিশ্চিন্ত হবার উপায় নেই।
৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে আছে প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া। সেমিফাইনালের টিকিটের জন্য বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে অসিরা।