চুনারুঘাট পৌর শহরে বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষকের জেলা কার্যালয় ও সাতছড়ি তেলমাছড়া বন বিটে মজুত রাখা বন বিভাগের হাতে জব্দ হওয়া কোটি টাকার গাছ খাচ্ছে মাটি আর আগাছায়।
জানা গেছে, মামলার দীর্ঘ সূত্রতার কারণে সেখানে
খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা এসব গাছ ভিজে পচে যাচ্ছে। অনেক গাছ ঘুণে খাচ্ছে। কিছু নষ্ট হয়ে মিশে যাচ্ছে মাটিতে। শত শত ফুট মূল্যবান এসব কাঠের মূল্য কোটি টাকার ওপরে। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হলেও দেখা যায় এসব গাছের গুঁড়ি ব্যবহার বা বিক্রির উপযুক্ত থাকে না।
স্থানীয় বনাঞ্চল থেকে চুরি বা পাচারের সময় জব্দ করা সেগুন, চাপালিশ, চিকরাশি, মেহগনি, আকাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির শত শত ঘনফুট গাছের গুঁড়ি বছরের পর বছর ধরে মামলার আলামত হিসেবে সাতছড়ি, তেলমাছড়া ও বন বিভাগের সামনে পড়ে আছে। এসব দপ্তরের সামনে পড়ে রয়েছে এমন প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৭-৮ কোটি টাকা। এসব গাছের স্তূপ থাকায় বন বিভাগও পড়েছে বিপাকে। গাছগুলো নষ্ট হওয়ার আগে সরকার নিলামের ব্যবস্থা করলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বিপুল অর্থ জমা হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বন বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতছড়ি, তেলমাছড়া, রেমা-কালেঙ্গা, রঘুনন্দনসহ বিভিন্ন বাগান থেকে গাছ কেটে পাচার ও লুটের সময় বন বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। পরে এসব গাছ মামলার আলামত হিসেবে বন বিভাগ চত্বরে রাখা হয়। মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর সময় লাগার কারণে মূল্যবান এসব গাছ পড়ে থাকে। দিন দিন জব্দকৃত গাছের সংখ্যা বেড়ে বন বিভাগের কাঁধে যেমন বোঝা হয়েছে, তেমনি বন বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহতহচ্ছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে সহকারী বন সংরক্ষক মো. তারেক রহমান বলেন, আটক হওয়া এসব গাছ আমাদের কার্যালয়ের সামনে পড়ে থাকতে থাকতে শুধু নষ্ট হচ্ছে না, গাছগুলো ক্রমেই মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। অনেক সময় আসামিসহ গাছ ধরা হয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিলাম করার সুযোগ নেই। আর কিছু গাছ আছে আদালতের অনুমতি পেলে জব্দকৃত গাছগুলো নিলামে বিক্রি করে দিলে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা হতো। তা ছাড়া জন্দকৃত মালপত্রের বিষয়টি আদালতের। আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। এসব গাছ যাতে নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে আমি আদালতের সঙ্গে পরামর্শ করব; যাতে এসব মামলার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। এ ছাড়াও উপজেলার
সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বন বিটে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অযত্ন-অবহেলায় কয়েকশ ফুট মূল্যবান কাঠ পচে মাটির সঙ্গে মিশে নষ্ট হচ্ছে। সাতছড়ি বন বিভাগের রেঞ্জার মো. আল আমিন জানান, বিভিন্ন সময় চোরা কারবারিসহ এসব গাছ উদ্ধার করে এখানে রাখা হয়েছে। মামলা জটিলতায় কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন সময়ে আদালতে আবেদন করেছি।
অনুমতি পলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চুনারুঘাটের বাসিন্দা পরিবেশবিদ মোক্তাদির চৌধুরী কৃষাণ বলেন, গাছগুলো উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই কর্তৃপক্ষ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পারে এবং গাছগুলো কাজে লাগবে। তিনি মামলা নিষ্পত্তি করে গাছগুলো দ্রুত নিলামে দিতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।