অশুভ শক্তির বিনাশ করে বিশ্ব সংসারের মঙ্গল কামনার প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ‘অন্নদাত্রী’কে বিদায় জানিয়েছেন বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় হিন্দুদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, বিজয়া দশমীতে তার সাঙ্গ হল বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ফের দেবীকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানাতে অপেক্ষা করতে হবে এক বছর।
সাজেকে মঙ্গলবার দশমীর সকালে বিহিত পূজা সম্পন্ন করে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি ও শান্তির জল ছিঁটানোর পর দর্পণ-বিসর্জেনর আয়োজন সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হল হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট ও মাচালং এলাকার পূজামণ্ডপের প্রতিমাগুলো ট্রাকে কিংবা ভ্যানে করে প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নেওয়া হয় কাচালং নদীর তীরে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে প্রতিমা বিসর্জনে ভোগান্তিও পোহাতে হয়েছে। পলিথিন বা ত্রিপলে মুড়ে প্রতিমা তোলা হয় ট্রাকে।
প্রতি বছরের মত এবারও বিসর্জনের প্রধান স্থান ছিল কাচালং নদী। সকাল থেকে দেবিকে বির্জন দিতে মন্দিরে আসতে থাকে স্হানীয় পাহাড়ি নারী পুরুষরা। সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন এখানে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব নয় স্হানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে মিলিত হয়।
বাঘাইহাট বাজারের পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শুভ চৌধুরী দৈনিক প্রথম সংবাদ প্রতিনিধিকে বলেন। আমরা শান্তি পুর্নভাবে দেবি মাকে বির্জন দিয়েছে। পুজার কাজ সফল করতে স্হানীয় পুজা কমিটির সহায়তায় ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে। বাইরে থাকা যারা প্রতিমা নিয়ে কাচালং নদীতে যাচ্ছে, তারা নদীর স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে প্রতিমা দিয়ে দিবে। স্বেচ্ছাসেবকরাই বিসর্জনের কাজ সম্পন্ন করছে বলেন জানান।
সাজেক থানার ওসি দেবাশিষ রায় জানান, বিসর্জন ঘিরে বাঘাইহাট মাচালং বাজারের আশেপাশে এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
সাজেক ইউনিয়নে এ বছর ব্যক্তিগত, সার্বজনীনসহ ২টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমীর পূজা সম্পন্নের পর মর্ত্য ছেড়ে নিজালয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। বিজয়া দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ত্রিনয়নীর পূজা।
হিন্দুদের মতে, দেবী দুর্গা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের দেবী। একইসঙ্গে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’, ‘শক্তিরূপেণ’। ১৪ অক্টোবর মহালয়ার দিন সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের, আগামী ২৮ অক্টোবর কোজাগিরী পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দেবী পক্ষ।
সনাতন ধরর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মহালয়ার দিনে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা সন্তানদের নিয়ে কৈলাশের স্বামীর ঘর থেকে মর্ত্যে যাত্রা শুরু করেন। আর বিজয়া দশমীতে ফিরে যান। শাস্ত্রীয় মতে এবার দেবী দুর্গা কৈলাশ থেকে স্ব-পরিবারে মর্ত্য লোকে এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে। আবার ফিরেও যাচ্ছেন ঘোড়ায়।