বাগেরহাটের শরনখোলায় নির্মানাধীন বাঁধে ধ্বস

 

বাগেরহাটের শরনখোলায় বলেশ্বর নদীর ভূ-গর্ভস্হ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নির্মানাধীন প্রতিরক্ষা বাঁধে ধ্বস।

মূহুর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সেনাবাহিনীর নির্মিত রিং বেড়ী বাঁধ,এখন গ্রাস করেছে মূল বেঁড়ী বাধের অংশ।

ভাঙ্গনের তীব্রতা এতো বেশী যে কোনো সময়ে বিলীন হয়ে যাবে প্রতিরক্ষা বাঁধ সহ জনবসতির বড় একটা অংশঢি।

এলাকাবাসী জানিয়েছে স্হানীয় বেশকিছু জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে এই অবস্হা। অবৈধ এই বালু উত্তোলন বন্দের পাশাপাশি ভাঙ্গন ঠেকাতে অতিদ্রুত ব্যাবস্হা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। ভাঙ্গন ঠেকাতে তাৎক্ষনিক ভাবে ভাঙ্গন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাট। তবে এতে শেষ রক্ষা হবেনা বলে পরীক্ষা চালিয়ে এমনটা আশংকা তাদের।

২০০৭ সালের ১৫ ই নভেম্বর ভয়ংকর ঘুর্ণিঝড় সিডর এর তান্ডবে দুর্যোগপূর্ণ উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের শরনখোলার সাউথখালী এলাকায় তীব্র জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় জনপদ। ভেসে যায় গবাদি পশু পাখি, নারী, পুরুষ ও শিশুরা। মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয় সাউথখালী ইউনিয়ন। তখন থেকেই তাদের একটাই প্রানের দাবি ছিলো ত্রাণ চাইনা টেকসই বেড়ী বাঁধ চাই।তাদের এই দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সিইআইপি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়ি বাঁধটির নির্মান কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই গাবতলা বাজার থেকে বাবলাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার মূল বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। একেবারে ভাঙনের মুখে রয়েছে বাঁধের পাশে অবস্থিত আশার আলো মসজিদ কাম সাইক্লোন শেল্টার এবং অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। গত ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত থেকেই ভাঙন শুরু হয়ে বুধবার সকাল ও দুপুরে জোয়ার ও ভাটির টানে সেই ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রথমে সেনাবাহিনীর জরুরিভাবে নির্মিত রিং বাঁধের বহিরাংশের কমপক্ষে ছয় বিঘা জমি গাছপালাসহ বলেশ্বরে তলিয়ে যায়। এরপর আশার আলো মসজিদ কাম সাইক্লোন শেল্টার থেকে ডিএস-৭ স্লুইসগেট পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মিটার বাঁধে ফাটল ধরে তলিয়ে যাওয়া শুরু করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষনিকভাবে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ফেরানো যাবে না। মূল বাঁধসহ বাঁধের পাশের স্থাপনা রক্ষা করতে হলে টেকসই নদীশাসন এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা দরকার। তা না হলে এই বাঁধ জনগণের কোনো কাজে আসবে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বলেশ্বর নদের ভাঙনে তাদের এলাকার শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ভাঙনরোধে জিও ব্যাগে বালু ভরে ডাম্পিং শুরু হয়েছে।তবে এতে ভাঙ্গন রোধ হবে বলে মনে হয়না, ভাঙ্গন রোধে নদী শাসন জরুরী।

স্থায়ী নদীশাসনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বলেশ্বর নদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নদীশাসনের জন্য ডিপিপি তৈরি করে আরো দুই বছর আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিইআইপি কর্তৃপক্ষ ডিসেম্বরে আমাদের কাছে বাঁধ হস্তান্তর করবে। হস্তান্তর হলে পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ,টেকসই বেড়ীবাঁধ এবং নদী শাসনের মাধ্যমে এই এলাকার ভয়াবহ ভাঙ্গন ঠেকাতে সংশ্লিষ্টরা ভূমিকা রাখবেন এটাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles