পাকিস্তানের ভালো স্পিনারের অভাব

 

একই ম্যাচে বোলারারা যেখানে ১৫২টি ডট বল দিচ্ছে, আবার সেই ম্যাচেই তাদের সামনে ৩৬৭ বিশাল টার্গেট এসেছে, এমন পরিস্থিতি কেবলমাত্র পাকিস্তান দলের পক্ষেই সম্ভব। শুক্রবার বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। অথচ পাকিস্তানী বোলিং বিভাগে কোন বাজে বিষয় ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা বের করতে পারেনি।

বিশ্বের অন্যান্য সব দলের তুলনায় পাকিস্তান ক্রিকেটে অনেক আগে থেকেই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা লেগে আছে। কখন যে তাদের ম্যাচে পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয় তা বলা যায়না। সবসময়ই সবাইকে অতিরিক্ত কিছুর জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়, মাঝামাঝি বলে এখানে কোন কথা নেই। অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাক বোলাররা সব মিলিয়ে ২৯টি বাউন্ডারি ও ১৯টি ওভার বাউন্ডারি হজম করেছে। যদিও তাদের মূল বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি ৫৪ রানে ৫ উইকেট দখল করে নিজেকে ঠিই প্রমান করেছেন। বিশ^কাপে শাহিনের এটাই সেরা বোলিং ফিগার ।

একটি বিষয় নিশ্চিত যে নাসিম শাহর অনুপস্থিতি দলকে বেশ ভোগাচ্ছে। অন্যদিকে হারিস রউফের ম্যাচ খেলার অভাব ও আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃত স্পিনারের অভাবে ভারতের মাটিতে পুরো পাকিস্তান দল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

উদাহরনস্বরুপ বলা যায় ভারতীয় উইকেটের সাথে রউফ কোনভাবেই মানিয়ে নিতে পারছেন না। অতিরিক্ত শর্ট বল দিতে গিয়ে তিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বাউন্ডারি হাঁকাতে সুবিধা করতে দিচ্ছেন। চার ম্যাচে এ পর্যন্ত রউফকে ১১টি ওভার বাউন্ডারি হজম করতে হয়েছে। প্রতি ম্যাচে গড়ে যা দুটিরও বেশী। এটা কোনভাবেই এই মানের একজন বোলারের জন্য কোন সুখকর পরিসংখ্যান হতে পারেনা। এতে কার্যত প্রতি ম্যাচে পাকিস্তান প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ব্যাটিংয়ে সুবিধা করে দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান বিপক্ষে প্রথম ওভারে তিনি ২৪ রান দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৮ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এই বোলিং ফিগার অবশ্যই তিনি আজীবন মনে রাখবেন।

কিংবদন্তী সাবেক খেলোয়াড় ওয়াসিম আকরাম পাকিস্তানী জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘প্যাভিলিয়ন’ এ রউফ সম্পর্কে বলেছেন, ‘রউফ এখনো ঘরোয় ক্রিকেটেই অনিয়মিত। ওয়ানডেতে তার সমস্যা আছে। টি-টোয়েন্টিতে কোনভাবে বেঁচে যাওয়া যায়, কারন সেখানে মাত্র ৪ ওভার বল করতে হয়। কিন্তু ওয়ানডেতে কিছু করতে হলে ঘরোয়া ঐ ফর্মেটের উপর জোড় দিতে হবে। আমি রউফকে ছয়টি বল ভাল লেংথে স্টাম্প বরাবর করা দেখতে চাই।’

পাকিস্তানী বোলাদের মধ্যে পরিকল্পনায়ও অনেক সমস্যা রয়েছে। ফাস্ট বোলারদের কাছ থেবে সবময়ই ফুল-লেংথ বোলিং সবাই আশা করে থাকে। বিশেষ করে বø্যাক-হোল পজিশনে বল করতেই হবে তাদেরকে। নাহলে কোন লাভ নেই। চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামে স্ট্রেইট বাউন্ডারির দূরত্ব ৭২ মিটার। এখানে ইয়র্কার লেংথের বল দিলে সরাসরি বাউন্ডারি মারাটা কঠিন। কিন্তু রউফ বারবার শর্টার ডেলিভারি দিয়ে গেছে এবং মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নারকে উইকেটে উভয় দিকে আড়াআাড়ি ভাবে শট খেলতে সুযোগ করে দিয়েছে।

ম্যাচ সম্পর্কে সচেতনতা প্রসঙ্গে হাসান আলিকে নিয়ে নিজের একটি পর্যবেক্ষনের কথা বলেছেন সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। স্কয়ার লেগ ও মিড উইকেট এই দুটি পজিশন মার্শের ফেবারিট জায়গা সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্তে¡ও হাসান তার স্কয়ার লেগ ফিল্ডারকে ৩০ গজের মধ্যেই রেখেছিলেন, একইসাথে থার্ড ম্যানকে কিছুটা এগিয়ে এনেছিলেন।

লেগ স্পিনার উসামা মিরও বোলিংয়ে সময় অন সাইডে পাঁচজনকে রেখেছেন। অথচ ডান হাতি মার্শকে সে একটিও গুগলি বল করেননি। মিড-অন ও মিড-অফ ফিল্ডারকে একটু উপরে রেখে থার্ড ম্যানকে বাউন্ডারিতে রেখে দুই অস্ট্রেলিয়ান সেঞ্চুরিয়ানের বিপরীতে পাকিস্তানী বোলাররা কোন পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করতে পারেননি বলে মিসবাহ মন্তব্য করেছেন।

আরেক সাবেক বোলার আকিব জাভেদ বিশ্বকাপের শুরুতেই এই বিষয়গুলোকে সামনে এনেছিলেন। মিডল ওভারে পার্থক্য গড়ে দেবার জন্য পাকিস্তানের অবশ্যই ভাল স্পিনারের প্রয়োজন ছিল। দলে এই মুহূর্তে থাকা শাদাব খান কিংবা উসামা কেউই অধিনায়ক বাবর আজমকে কোন সহযোগিতা করতে পারছেন না।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles