ডিএনসিসির মশক বিরোধী অভিযানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী 

 

 

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এবং ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম রোববার (৮ অক্টোবর ) দুপুরে রাজধানীর বাড্ডা ও নতুন বাজার এলাকায় ডিএনসিসির মশক বিরোধী ঝটিকা অভিযান পরিদর্শন করেন।

এসময় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জুলকার নায়ন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একটি নির্মাণাধীন ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ০৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়াও অন্য দুইটি ভবনে লার্ভা পাওয়ায় দুটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের ধারক ও বাহক এডিস মশা মূলত মানুষের বাসা বাড়ি কিংবা নির্মাণাধীন স্থাপনায় জন্ম নেয়। এ মশা নদী, নালা, খাল, বিল, নর্দমার পানিতে জন্ম নেয় না। এ মশা প্রজননের জন্য জমাটবদ্ধ পরিষ্কার পানি প্রয়োজন হয়। ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে জনগণকে সাথে নিয়ে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি করা।’

এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে গৃহীত পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টিভিসি প্রচারসহ পত্রপত্রিকায়ও বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া বছরের প্রথম থেকেই আমরা আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় মিটিংসহ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমশ নিম্নমুখী উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আমাদের আরও মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে, সচেতনতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে।’

অভিযান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এখন পর্যন্ত ০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। আমরা যদি এডিস মশা না পেতাম, তাহলে তো জরিমানা করতাম না। দুই মাস আগে একেকদিন কারো বাড়িতে পাঁচ লাখ, কারো অফিসে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এমনকি একদিনে ২৫ লাখ টাকাও জরিমানা করা হয়েছে। আজকেও বিশেষ অভিযান চলছে।

মেয়র বলেন, ‘অক্টোবর মাসে এখন বৃষ্টি হচ্ছে আবার রোদ হচ্ছে। এই আবহাওয়ায় এডিস মশার লার্ভা বেশি জন্মায়।বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা উত্তর সিটি কর্পরেশন একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা আমাদের আওতাধীন থানাভিত্তিক অভিযান করছি। এতে আমরা বেশি এলাকায় যেতে পারবো এবং মশা নিধন করতে পারবো।’

নতুন এ পরিকল্পনা সম্পর্কে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমার প্রতিটি থানাকে প্রথমে ছয়টি জোনে ভাগ করেছি। আবার এ ছয়টি জোনের প্রতিটিকে ১০ ভাগ করে নিয়েছি। অর্থাৎ প্রতিটি থানাকে ৬০ ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাগে গতকাল শনিবার থেকে আমাদের টিম মশা নিধনের কাজ করছে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এরপর আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে জরিপ করবো এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও জরিপ করতে বলবো। প্রয়োজনে আমরা আমাদের এ কার্যক্রম আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেবো।’

নগরবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই না জরিমানা করতে। এডিস মশা ড্রেনে হয় না, বাসা বাড়িতে হচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে কার পার্কিং, গাড়ি ধোয়ার কাজ করা হয়, সেখানে এডিস মশা জন্মাচ্ছে। গাড়ি ধোয়ার পর সেই জায়গায় একটু ব্লিচিং পাউডার, কেরোসিন ছিটিয়ে দিলেই হয়। আমাদের অভিযান সাত দিন, সাত দিন করে চলবে। পাশাপাশি আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, পাড়া-মহল্লা, মসজিদ, প্যাগোডা, স্কুলে সব জায়গায় যেন আলোচনার বিষয়বস্তু হয় এডিস মশা। এটিকে কোনোভাবে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। একটি মৃত্যু একটি পরিবারের ধ্বংস নিয়ে আসে। তাই আমরা সবাই একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি, এডিস মশার জন্য যার যার বাসা বাড়ি পরিষ্কার রাখি।

মেয়র আরও বলেন, ‘জনগণকে যত বেশি সম্পৃক্ত করতে পারবো, ততবেশি আমরা এডিস মশা থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারবো। অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু নেই এটি আমরা যেন মোটেই না ভাবি। এখনো আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমি জনসাধারণকে অনুরোধ করবো, আপনারা কোথাও পানি জমা দেখলে আমাদের হটলাইনে কল করুন। এছাড়া আমাদের ওয়েবসাইটে গেলে এখন দেখা যাবে, কোন ওয়ার্ডে কে মশক সুপারভাইজার, কে সহকারী হেলথ অফিসার, কে ডেপুটি সহকারী হেলথ অফিসার। সবার নাম্বার দেওয়া আছে। আপনারা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন।

অভিযানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম গণি, ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, রোববারের এ অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ০৮মামলায় মোট ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে ডিএনসিসির অঞ্চল-০৫ এ ০৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অঞ্চল-০৩ এ ০৩ লাখ টাকা, অঞ্চল-১ এ ৩০ হাজার টাকা, অঞ্চল-২ এ ২০ হাজার টাকা, অঞ্চল-০৬ এ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles


Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (1) in /home11/onzcfyam/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464

Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (1) in /home11/onzcfyam/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464